Ahankari Priti Bengali Short Story Written by Khushi Sarkar
Ahankari Priti Bengali Short Story Written by Khushi Sarkar
অহংকারী প্রীতি গল্পটি লিখেছেন লেখিকা খুশী সরকার।
Story Category - Short Story
Language - Bengali
The Name of Story - Ahankari Priti
Author - Khushi Sarkar
বাড়িতে সেদিন প্রচুর লোক। পুজো উপলক্ষেই এসেছে মা-বাবা বোন বনি, ভাইয়ের বউ-বাচ্চা এবং বোনের মেয়ে রীতি। মনি সবাইকে নিমন্তন্ন করেছে। এবার একসঙ্গে পুজো কাটাবে বলে। বাড়িতে তাই ভীষণ আনন্দ। মেয়ে-জামাইও নিমন্ত্রিত কিন্তু তারা আসেনি এখনোও। মাঝে মাঝে মনি কান খাড়া করে শুনে, গাড়ির আওয়াজ। মূহুর্মূহু ভাবছে, এই আসছে বুঝি। গ্রামের বাড়ি খোলামেলা। পাশে দুর্গা মণ্ডপে বাচ্চাগুলো চিৎকার চেঁচামেচি করছে।আর এদিকে বড়রা সবাই মিলে মেতে উঠেছে রসালাপে কিন্তু মনির সেদিকে লক্ষ্য নেই। মাঝে মাঝে তাকায় দরজা দিকে, কখনো বাচ্চাগুলোকে ধমক দেয়, চুপচাপ থাকবার জন্য। তারা কিছুক্ষণ চুপ থাকলেও আবার শুরু করে হইচই। মনির চোখ দুটো যেন অস্থির, বড়ই চঞ্চল। হঠাৎ গাড়ির হর্ন বাজে। মনি ছুটে যায়--- "এসেছিস" আত্মতৃপ্তির হাসি হেসে মনি জিজ্ঞেস করে মেয়েকে
"হ্যাঁ" ছোট্ট উত্তর দেয় প্রীতি।
" সত্যি তোর জন্যই তো সবাই অপেক্ষা করছে, কখন তুই আসবি" যেন মনির গলায় ফুটে উঠে একটা স্বস্তি। মেয়েকে নিয়ে সামনে এগুতেই প্রীতি বলে, "দাড়াও, তুমি গাড়িতে রাখা ব্যাগ গুলো নিয়ে এসো।" গাড়ির দরজা খুলে ভারী ভারী কয়েকটা ব্যাগ সিঁড়ি ভেঙে উপরে নিয়ে আসে মনি। প্রীতিকে দেখেই বনি হাসতে হাসতে বলে, এতক্ষণ দেরি করলি, মা?
দর্পিত উত্তর দেয় প্রীতি," ডাক্তারদের আবার টাইমটেবল আছে নাকি" একটু থতমত খেয়ে যায় বনি।
"হ্যাঁ, তা তো ঠিকই। তা তোর শশুর শাশুড়ি সবাই ভালো আছে তো?
"ওরা সব সময় ভালো থাকে, মাসি। তা তোমরা কবে এলে মাসি?
"এইতো সকালে" তোর মা কতবার ফোন করেছে, জানিস?
"মায়ের আর কি কাজ, ফোন নিয়েই বসে থাকে" কেমন যেন নীরস কথাগুলো বলে প্রীতি।
"আমার কাজ নেই, শুনলি" বনির দিকে তাকিয়ে মনি সমর্থনের আশায়।
বনিও কথাটা সমর্থন করে বলে, তা তো দিদির এখন একটু কাজকর্ম কমই কিন্তু তোর পড়াশোনার সময় দিদির তো কম খাটুনি হয়নি বল্?
"ও তো সব মায়েরাই করে,এতে আবার বাহাদুরীর কি আছে? তাছাড়া আমি পড়াশোনা করেছিলাম বলেই তো ডাক্তার হয়েছি, তাই না, বলো? বলেই একটা আত্মতুষ্টির মুচকি হাসি হাসে প্রীতি। সবাই চুপ করে শুনে ওর কথা। বনি বুঝতে পারে প্রীতির কথার ইঙ্গিত। ঘটনাটা সামলে নেওয়ার জন্য বনি একগাল হেসে বলে, তাইতো, তাইতো এতে তোর মায়ের কোনো ক্রেডিট নেই, একদম সত্যি কথা। আচ্ছা জামাই কখন আসবে রে?বনি জানতে চায়।
"ও এখানে আসতে চায় না, মাসি।
"কেন" পুজোতে জামাই শ্বশুর বাড়ি আসবে না, তাই কি হয়! আশান্বিত হয়ে বলে বনি।
"আসলে এখানে ওর মতো ও পরিবেশ পায় না"আসলেই দেখে, মা নিজে রান্না করে,ঘেমে-ঘুমে একসা হয়ে নোংরা কাপড় পরে থাকে।জানো মাসি, ওদের বাড়িতে দু'জন কাজের লোক।রান্না করার আর বাইরের কাজের।আমার শাশুড়ি ভীষণ স্মার্ট। সবসময় টিপটপ থাকে। আর কত গণ্যমান্য লোকের যাতায়াত ওই বাড়িতে। আমাকে কিছুটি করতে হয় না। আমি শুধু ব্যস্ত থাকি আমার চেম্বার নিয়ে।" কথাগুলো খুব গর্বের সঙ্গে বলে প্রীতি। মনি মনে ভাবে, সে তো মা। তার তো রাগ করা চলে না। তাই হাসি মুখেই বলে, আমার তো খুবই আনন্দ,সুখে আছিস, এটাই তো সব মা-বাপ চায়, তাই না,বল? "তুমি আমার সুখের ব্যবস্থা করেছো?কথায় প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপে জানায় প্রীতি,আমি নিজেই সুখের ব্যবস্থা করেছি"। হতবাক হয়ে যায় মনি কথাগুলো শুনে, যেন তার বুকে বিঁধে তিরের মতো। কষ্টে বুকটা ফেটে যায়, চোখের জলে ভেসে ওঠে সেই অতীত। অভিশপ্ত জীবন তার। তখনো চাকরি হয়নি, স্বামীরও চাকরি হয়নি। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে একদিন শূন্য হাতে উঠে আসতে হয়েছিল ভাড়া বাড়িতে। দরজায় দরজায় ঘুরে ঘুরে টিউশনি করে দু'মুঠো পেটের ভাত জোগাড় করেছে সে। সেই তপ্ত মরুভূমির বুকে এক পশলা বৃষ্টির মতো প্রীতি এল তার পেটে। ঈশ্বরবিশ্বাসী মনির মনে হল, এ যেন তার পরম দয়ালের আশীর্বাদ। তারপরেই হলো তার চাকরি কিন্তু অর্থাভাবে চাকরিটা হাতছাড়া হবার জোগাড়, ঠিক সেই মুহূর্তে দেবদূতের মতো তার বিপদ থেকে উদ্ধারে এগিয়ে এল সহৃদয় এক বন্ধু। চাকরিতে জয়েন করার কয়েক মাস পরেই এলো প্রীতি আর সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিল, মেয়েকে এমন ভাবে গড়ে তুলবে যাতে কোনো অবস্থায় সে পরমুখাপেক্ষী হয়ে জীবন না কাটায়। তার জন্যই প্রাণপণে সে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছে বহু ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যেও। ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভাবে নি কখনো। দিনরাত এক করে চাকরি, সংসার, সন্তানের দায়িত্ব পালন করেছে একমনে অথচ আজ সে স্মার্ট মা হতে পারেনি। মনি ভাবে, সবই তার ব্যর্থতা।
সময় পাল্টায়, পাল্টায় মানুষের মন। কিন্তু অতীত থেকে যায় গোপনে মনের কোণে আগের মতোই। মুখে বিষন্ন হাসি নিয়ে ভেবে চলে তার সেই পুরনো স্মৃতি। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফিরে আসে বর্তমানে। "ঠিক আছে" আমি না হয় তোর শাশুড়ির মতো স্মার্ট নই তবু তোর মা, বল্?
"মা তো বটেই কিন্তু ডাক্তারের মা হিসেবে তোমাকে ঠিক মানায় না।"
প্রীতির কথায় মনি বলে, মাগো, আমি এখন আর কি বদলাবো বল্? আমি যা, আমি তা-ই, এভাবেই তোকে নিতে হবে।
Some more stories of Author Khushi Sarkar
"এইজন্যই তো আমি তোমার বাড়ি আসতে চাই না, তুমি আমার স্ট্যাটাস কখনো ভাবো না, নিজে যা বোঝো তা-ই করো, আমি এখানের চেয়ে ওখানেই থাকি ভালো"
-- মা-মেয়ের এই কথোপকথনে যেন আনন্দের আড্ডা বিষাদ মলিন হয়ে পড়ে। পরিবেশটাকে হালকা করবার জন্য বোনের মেয়ে রীত প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলে, ও দিদি তুই মাসিকে ওভাবে বলছিস কেন? মাসি সাধারণ থাকতেই বেশি পছন্দ করে। তাছাড়া সারাদিন কত কাজকর্ম করে। আচ্ছা ছাড্ তো ওসব কথা,চল্ গল্প করি।
ওসব গল্পগুজব আমি পছন্দ করি না, টিপিক্যাল মানসিকতার গল্প। কোনো নিয়ম কানুন সংস্কার মানি না। তাছাড়া গল্পগুজব করে কি টাকা আসবে? প্রাকটিস করলে বরং আমার টাকা ।
-- প্রীতির দম্ভপূর্ণ কথায় রীতি যেন একটু অপ্রতিভ হয়। বড্ড অচেনা লাগে প্রীতিকে অথচ প্রায় সমবয়সী ওরা, একসঙ্গে বড়ো হয়েছে। আগে কত নম্র ছিল,বেশি কথা বলত না কিন্তু মাত্র কয়েক বছর পরেই কেমন যেন বদলে গেছে ও। আত্মসম্মানবোধে আর প্রীতির সঙ্গে কথা বলে না রীতি।
রাত্রে খাওয়া-দাওয়া করে প্রীতি চলে যায় শ্বশুর বাড়ি। মেয়ের জন্য মনির বড় কষ্ট হয়, আকুল হয় দুটো আদরমাখা কথা শোনার জন্য কিন্তু সেই আকুলতা নীরস পাথরের বুকে আঘাত পেয়ে বুদবুদের মত মিলিয়ে যায় পরক্ষনেই। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তবুও মনে মনে আশীর্বাদ করে, এভাবেই চিরদিন সুখে থাকিস মা, আমার কথা নাই বা ভাবলি।
সময় এগিয়ে চলে। মনিও বুকের ব্যথা বুকে চেপে এগিয়ে যায় তবুও মেয়ের সুখী জীবন দেখে বড্ড শান্তি পায়। মনি মাঝে মাঝে প্রীতির সঙ্গে ফোনে কথা বলে অবশ্য তবে মানসিকতা খুব একটা না মিললেও মেয়ে তো, একমাত্র মেয়ে। কখনো কখনো বেদনায় বালিশে মুখ ঢেকে কাঁদে মনি। বুকে বড় কষ্ট হয় তার। মেয়ে তাকে বুঝলো না কোনোদিন।
তবুও শান্তি-----
"মা আমি কাল সকালে বাড়ি আসছি"--- একদিন রাতে ফোনে এই কথা শুনে যেন অজানা ঝড়ের আশঙ্কা বুক কেঁপে ওঠে তার।
"বেশ তো, আয়, খুব ভালো হবে।দু-একদিন থেকে যাবি"। বুকে কষ্ট চেপে মুখে হাসি টেনে বলে মনি।যেন এইটুকু মিথ্যাচারণেও একরাশ তৃপ্তি খুঁজে পায়।
"এক-দু'দিন না, আমি একেবারে চলে যাচ্ছি" চমকে ওঠে মনি,কি বলছিস উল্টোপাল্টা?
"না, না উল্টোপাল্টা নয়, একদম সত্যি কথা। তোমাকে বলিনি, অনেকদিন ধরে একটা ঝামেলা চলছে। আমি আর পারছি না, মা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, "ওর সংসার করবো না আর"-- কথাগুলো শুনে বাকরুদ্ধ মনি। মোবাইলটা ধরেই থাকে।
"মা, শুনতে পাচ্ছো, হ্যালো হ্যালো"-------
অনেকক্ষণ পর মনি সুস্থ হয়ে অস্ফুটে বলে,এ হয় না মা। সংসার কোনো পুতুল খেলা নয়, যে যখন খুশি খেললাম,আর যখন খুশি ভেঙে ফেললাম।তবে হ্যাঁ মাঝে মাঝে ঝড় ঝাপটা আসে, সেগুলো সামলেই সংসার করতে হয়।মায়ের কথা কেড়ে নিয়ে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে প্রীতি বলে,অত কথা আমি শুনতে চায় না। তুমি যদি থাকতে দাও তো ওখানে যাবো,নাহলে সুইসাইড করবো"না না ও কথা মুখে আনবি না,তুই আয়, মা,মায়ের কাছে আয়।"
পরের দিন প্রীতি চলে আসে। ওর চেহারা দেখে মনি অবাক হয়ে যায়।একি চেহারা হয়েছে তোর! কতদিন ধরে তোদের ঝামেলা!কই বলিস নি তো! চোখের কোলে কালি, হাড় বেরিয়ে গেছে, গায়ে কালশিটে দাগ! মায়ের কোনো কথার উত্তর দেয় না প্রীতি। চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে।মেয়ের এই দুর্দশা দেখে মনি বার বার জানতে চায়, কি হয়েছে বল, মা।
"রোজ রাতে নেশা করে।যেন-তেন ছল ছুতোয় গায়ে হাত তোলে, আমি আর পারছি না মা।"চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে শ্রাবণের ধারার মতো।
"না, না একদম কাঁদবি না। কাঁদার জন্য তুই জন্মাস নি। তোর ভয় কিসের? নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছিস তুই। নিজের মতোই বাঁচবি এখন থেকে"-- দৃঢ়তায় চোয়াল শক্ত করে মেয়েকে প্রেরণা দেয় মনি। উদাসী চোখে জানলা দিয়ে বাইরে দেখে প্রীতি। ঝলমলে রোদে ভেসে যাচ্ছে পৃথিবী। কর্মব্যস্ততার কোলাহলে পূর্ণ জীবন। তবুও এই ঝলমলে আকাশে একখণ্ড কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক।
কলমে--খুশী সরকার
তাং--১৫-০৯-২০২১
No comments:
Post a Comment
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.