Mithyar Fans Bengali Short Story Written by Khushi Sarkar
The Name of Story - Mithyar Fans
Story Category - Short Story
Author - Khushi Sarkar
Language - Bengali
Mithyar Fans Bengali Short Story written by Khushi Sarkar
মিথ্যার ফাঁস ছোটগল্পটি লিখেছেন লেখিকা খুশী সরকার।
'Summary of the story' - In the present consumerist life, people are intoxicated with the love of strangers. Unrest is coming down in the world for this foreign love. There are quarrels between husband and wife. Not only that, the rules and regulations of the society are being disrupted. People's lives are being deprived of morality. The sense of decency of life is being lost in the love of destructive strangers. Many lives are being wasted as a result of which people become emotional and become 'world-trees' in their own lives, and their family life is enjoying poisonous fruits.
The story is written for this purpose as a precaution.
গল্পের সারমর্ম-- বর্তমান ভোগবাদী জীবনে পরকীয়া প্রেমে মত্ত মানুষ। এই পরকীয়া প্রেমের জন্য সংসারে নেমে আসছে অশান্তি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে লেগে থাকছে কলহ-বিবাদ। শুধু তাই নয় সমাজের নিয়ম-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। নৈতিকতা বর্জিত হচ্ছে মানুষের জীবন। সর্বনাশা পরকীয়া প্রেমে জীবনের শালীনতাবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক জীবন নষ্ট হচ্ছে ফলে মানুষ আবেগপ্রবণ হয়ে নিজের জীবনে নিজেই হয়ে উঠছে বিশবৃক্ষ আর বিষময় ফল ভোগ করছে তার পারিবারিক জীবন। এই উদ্দেশ্যেই সাবধানতা অবলম্বনের জন্য গল্পটি রচিত।
ছোটগল্প - মিথ্যার ফাঁস
কলমে - খুশী সরকার
রাধাদের গাড়িটা পলকে চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে গেলো। লোকে-লোকারণ্য চারদিক। সবার চোখেই জল। আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে তুলসীর মা বলে, সত্যিই মেয়েটা কপাল করে জন্মেছিল,তাই অমন বর- ঘর পেল।রাধার কাকি বাড়ি যেতে যেতে বলে, মেয়েরা যেমন ভারি তেমনি হালকা। কালী পূজার মতো এক রাতে শেষ। ঘর বারান্দা উঠোন চারিদিক চেয়ে দেখে সজল চোখে রাধার মা,সব যেন খাঁ খাঁ করছে। ফাঁকা হয়ে গেছে তার বুক তবু এক টুকরো শান্তি খুঁজে পায়, আমার যা হয় হোক, মেয়েটা তো সুখে থাকবে--- ভাবতে-ভাবতে চারদিকে ছড়ানো-ছিটানো জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখে। হঠাৎ তার মনের মধ্যে উদয় হয়, সত্যি কি হুড়মুড় করে বিয়েটা হলো। মেয়েটা তার বড় আদরের, সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে অথচ সুধীরবাবু সামান্য একটা ব্যবসা করেন। কোনোমতে চলে সংসার। রাধা যেন গোবরে পদ্ম ফুলের মতো জন্মেছিল অভাবের সংসারে। রাধা তাদের এত ভালো মেয়ে যেন রূপে সরস্বতী গুণে লক্ষ্মী। হঠাৎ রাধার মায়ের মনে পড়ে যায়, এইতো সেদিন পাশের বাড়ি পাত্রী দেখতে এলো বরপক্ষের লোকজন অথচ সেই পাত্রীকে পছন্দ না করে পছন্দ করলো আমার মেয়েকে ওই একঝলক দেখেই! আমার মেয়ে তো গরীবের মেয়ে অথচ ওরা কতো বড়লোক!
পাশে বসেছিল পাড়ার সোমার মা, হঠাৎ ঠোঁট সামনে লম্বা করে মাথা নাড়িয়ে বলে, "শুধু কি বড়লোক, জামাই তো তোমার ভালো কোম্পানিতে চাকরি করে গো? তোমাদের মেয়ের কপাল! মেঘ না চাইতে জল পেয়ে গেলো। দেখো, "অত বড় ধনী দুলাল বাবুর মেয়েকে দেখতে এলো। মেয়েটাও কি কম সুন্দরী! কত্ত লেখাপড়া জানে অথচ তোমার মেয়েকে ওরা পছন্দ করলো। তুমি আর মন খারাপ করো না, মেয়ে তোমার সুখেই থাকবে গো। আজ উঠি গো রাধার মা?"
রাধা বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়ি গেল। রাধা অত্যন্ত লাজুক ও সরল প্রকৃতির মেয়ে। মা-বাবা আর বোনকে নিয়ে ছিল তার জগৎ। সে বাবার অর্থনৈতিক অভাবের জন্য অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে কিন্তু শালীনতাবোধ মিষ্টভাষী এবং মধুর ব্যবহার ও চালচলনে গ্রামের সবাই তাকে পছন্দ করে। রাধার মন ছিল খোলা আকাশের মতো। হাসিখুশি ও প্রাঞ্জল স্বভাবে সে সবার প্রিয় ছিল।
শ্বশুরবাড়িতে পদার্পণ করে রাধা চারদিকে অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখে আর মনে মনে ভাবে, এতো সুখও তার কপালে ছিল! শ্বশুর-শাশুড়ি অত্যন্ত ভালো মানুষ। তাঁরা বৌমা বলতে অজ্ঞান। তাঁদের কাছে সে মেয়ের মতো ব্যবহার ও আদর পায়। তাই খুব সহজেই মন বসে যায় শ্বশুর বাড়ি। কিন্তু স্বামীকে সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না। মনে মনে ভাবে শাশুড়ি তাকে কতো ভালবাসে! বৌমার হাতে রান্না খাবে বলে রান্নার লোক রাখেনি। রান্নার প্রশংসা করে পঞ্চমুখে।রাধার খুব গর্ব হয়। স্বামীও প্রত্যেকদিন ঠিক সময়ে অফিসে যায়, আসে কিন্তু কথাবার্তা তেমন রাধার সঙ্গে বলে না। যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ মোবাইল নিয়ে কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলতেই থাকে। রাধার খুব ইচ্ছা হয় স্বামীর সঙ্গে একটু গল্প করে।
"আমি কিন্তু নিজের কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকি, তোমাকে আমি তেমন সময় দিতে পারি না বলে মনে কিছু করো না" -- হঠাৎ একদিন স্বামী তাকে ডেকে বলে।
ঠিক আছে-- সহজ সরল রাধা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। যথারীতি সময় এগিয়ে চলে। কিন্তু ক্রমেই যেন রাধার উপরে সংসারের সমস্ত কাজের চাপ পড়তে থাকে।
আমার ভীষণ কোমর ব্যথা, কোনো কাজ করতে পারবো না মা--তুমি দেখেশুনে সব কাজ করো কেমন?---হঠাৎ একদিন শাশুড়ি জানিয়ে দেয়। শাশুড়ির নরম কথায় রাধা গলে যায়, ভাবে আমার মাও যদি এমন হতো তাহলে তো করতেই হতো। এটা আমার শ্বশুরবাড়ি, এদের দেখাশোনা সেবা করা আমার দায়িত্ব তাই সহজ ভাবে সে মাথা পেতে নেয় সব দায়িত্ব কিন্ত ক্রমে দেখে অফিসে যাওয়ার কিম্বা আসার পরে খেতে দিলে ঠিকমত খায় না শ্যাম, সামান্য একটু খেয়ে উঠে যায়।
"কিগো তুমি ঠিকমতো খাও না কেন"রাধা জিজ্ঞেস করে।
"যা রান্না করো, আমার ভালো লাগে না"
"আগে তো বলতে ভালো"
"এখন আর ভালো লাগে না" রাধা অবাক শ্যামের কথা শুনে।রাধা হয়তো সত্যি।
"মা, আমাকে ভালো রান্না শিখিয়ে দেবেন?নরম সুরে বলে রাধা।
"তোমার মা কি তোমাকে কিছু শেখায় নি" রাগান্বিত স্বরে জানাই শাশুড়ি।
"আসলে আমাদের তো এত ভাল রান্না বেশি হতো না"মাথা নীচু করে বলে রাধা।
"গরিব ঘরের মেয়ে, কি করে জানবে" শাশুড়ির কথাটা আত্মসম্মানে লাগে রাধার তবুও মুখে কিছু বলে না।
প্রাণপণ চেষ্টা করে কিন্তু স্বামীকে সে কিছুতেই সুখী করতে পারে না। শাশুড়িও আজকাল কেমন যেন খারাপ ব্যবহার করে। চুপচাপ রাধা সব সহ্য করে যায়। শুধু তার মনে হয়, সে গরীব ঘরের মেয়ে, তাকে শ্বশুরবাড়িতে ভালোভাবে থাকতে হবে। বাবা-মার মুখ রক্ষা করতে হবে।
কিছুদিন পর রাধা লক্ষ্য করে শ্যাম দিনের-পর-দিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরে অনেক রাত করে। খেতে বললেই বলে খেয়ে এসেছি। আজকাল আরো বেশি চুপচাপ থাকে মোবাইলে মুখ গুঁজে। কোনো কথা শ্যামকে জানাতে পারে না রাধা। শুধু প্রশ্নের পর প্রশ্ন নিজের মনে পাহাড় হয়ে ওঠে। বাধ্য হয়ে একদিন জিজ্ঞেস করে, আমাকে যদি তোমার ভালো লেগেছিলো তবে সেই ভালবাসার প্রমাণ তো আমি দেখি না গো তোমার মধ্যে?
"কেন, তোমাকে কি ভালোবাসার প্রমান দিতে হবে? এইতো আমি মানুষটা আছি তোমার সামনে, সব সময় কি কথা বলা দরকার" তিরিক্ষি স্বরে রাধাকে বলে কিন্তু রাধার মনে খটকা লাগে, সত্যিই কি শ্যাম তাকে ভালোবাসে! তাহলে মোবাইলে এত কথা বলে কার সঙ্গে? কই তার সঙ্গে তো বলে না কোনো কথা!
রহস্য দানা বাঁধে মনে। সত্যি তা তার জানা দরকার। মোবাইল চার্জে দিয়ে বাথরুমে স্নান করতে যায় শ্যাম। সেই ফাঁকে মোবাইলে কল লিস্ট দেখে অর্পিতা নাম। অর্পিতা নাম সার্চ করে সে জানতে পারে সেই মেয়েটিও বাজাজ আলিয়াঞ্জ অফিসে চাকরি করে। শ্যামও তো এই অফিসেই চাকরি করে। তাহলে এর সঙ্গে তার সম্পর্ক কি?বড্ড কৌতূহল হয় তার।
বড়ো চিন্তায় পড়ে যায় রাধা। কাউকে জানাতেও পারে না মনের কথা। অসহায় লাগে তার, কিছু বুঝে উঠতে পারে না তার কি করা উচিত? সত্যিই কি শ্যামের সঙ্গে অর্পিতার কোনো পরকীয়া সম্পর্ক আছে? নাকি শুধুই সহকর্মীর সম্পর্ক! বিষয়টা তার জানা খুব প্রয়োজন।
পরের দিন অফিসে যাওয়ার আগে রাধা শ্যামকে বলে, বিয়ের পরে একদিন মাত্র বাপের বাড়ী গেছি, বাবা-মা'কে দেখার ভীষণ ইচ্ছে করছে"
"ঠিক আছে। কবে যাবে?"
যদি বলো, তবে আজই যাই। তবে আমি দুদিন এবার থাকবো।
তা, কি করে হবে? বাবা-মা রয়েছেন তাদের দেখাশোনা, রান্না-বান্না কে করে দেবে?
"একজন কাউকে রেখে দিও"
"ঠিক আছে"---মাথা নাড়ে শ্যাম।
পরেরদিন রাধা বাপের বাড়ি যায়। তার স্কুল জীবনের বন্ধু রাজুর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। রাজু তাকে যেকোনো বিপদে-আপদে সাহায্য করে। ভীষণ উপকারী ছেলে। রাজুকে সঙ্গে নিয়ে রাধা বর্ধমানের সেই বাজাজ আলিয়াঞ্জ অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মা'কে বলে যায়, সে একটা চাকরির ব্যাপারে যাচ্ছে। এতে তার ফিরতে রাতও হতে পারে, যেন চিন্তা না করে।
পরের দিন বর্ধমানে ভোরে পৌঁছে একটি চায়ের দোকানে ঢুকে চা পানের উদ্দেশ্যে। তখন সদ্য দোকান খুলছে দোকানী।
চা পেতে একটু দেরি হবে,জানিয়ে দেয় দোকানী। তাই তারা অগত্যা সেখানে অপেক্ষা করে। হঠাৎ দেখে দু'জন ব্যক্তি গল্প করতে করতে অত্যন্ত মশগুল হয়ে সে দোকানের দিকেই আসছে। সেই দু'জন ব্যক্তিও বসে তাদের বেঞ্চেরই একপাশে। কিন্তু দু'জনের মধ্যে এমনই গল্প যেন তাদের লক্ষ্য নেই। একজন আরেকজনকে বলছে আরে তুই জানিস না ছেলেটা বিবাহিত। তার স্ত্রী বাড়িতে আছে আর উনি চাকরি করতে এসে পরের বউকে নিয়ে ফষ্টিনষ্টি করছে। এরা নাকি শিক্ষিত। অন্যজন পাল্টা উত্তর দিয়ে বলে, আরে, এরা শিক্ষিত না ছাই। এরা বাইরে এসে এরকমই করে। এরা নাকি সমাজের বুদ্ধিজীবী! কথাগুলো রাধার শুনে কৌতহলী হয়ে পড়ে।
যেতে যেতে অন্য ব্যক্তিটি দাঁতে দাঁত চেপে বলে, তবে জানিস এসব ব্যাটা ছেলে আর মেয়ে ছেলেকে ধরে চাবকানো দরকার।এরাই হচ্ছে সমাজ নষ্টের কারণ।
"একটা কথা জিজ্ঞেস করবো,দাদা?"রাধা বলে।
"হ্যাঁ বলুন" দ্বিতীয় ব্যক্তি উত্তর দেয়।
"বলছি, বাজাজ অ্যালিঞ্জের অফিসটা কোন। দিকে? প্রশ্নটা শুনে সেই ব্যক্তি যেন একটু থতমত খায়। হঠাৎ রেগে গিয়ে বলে, কি ব্যাপার বলুন তো? সেই অফিস দেখে আপনি কি করবেন? আর আপনি কে?
"আসলে আমার দাদা ওই অফিসে চাকরি করে। তাই ভাবলাম এখানে যখন এসেছি, একটু দেখা করে যাই,রাধা শান্ত স্বরে উত্তর দেয়।
অন্য লোকটি মিটিমিটি হেসে বলে, ওটা অফিস নাকি? ওটা তো বৃন্দাবন। ওখানে রাধা-কৃষ্ণের লীলা দেখতে যাবেন নাকি?
এই বিদ্রুপপূর্ণ হাসিকে কাজে লাগিয়ে রাধা ভনিতা করে বলে রসালো ভঙ্গিতে, "ওমা তাই নাকি! কিন্তু জানেন,আমার দাদা ভালো মানুষ, অন্য কেউ হয়তো হবে----
আপনার দাদার নাম কি?
শ্যাম।
লোকটা চোখদুটো সরু করে উপরে তাকিয়ে বলে,
শ্যা-এ-ম!
"হ্যাঁ" সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয় রাধা।
সেই শ্যামসুন্দর তো রাই কিশোরীর সঙ্গে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে গো। যাও যাও একটু পরেই অফিস খুলবে। দেখবে রাইকিশোরী আর শ্যামের প্রেমলীলা। বাঁকা চোখে তাকিয়ে চলে যায় ওরা। ব্যাপারটা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারে রাধা। কেমন যেন একটা বিষন্নতা ঘিরে ধরে তাকে। মৌন হয়ে বসে থাকে।
"কিরে কী করবি এবার!" রাজুর কথায় সম্বিত ফিরে পায় রাধা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে রাধা,চল একটু সত্য- মিথ্যা যাচাই করেই নিই"।
"ঠিক আছে, চল" সম্মতি জানায় রাজু। দু'জনে অফিসের পাশে একটা পার্কে বসে। দশটা নাগাদ দেখে একজন মহিলা এবং একজন পুরুষ পাশাপাশি কথা বলতে বলতে হেঁটে আসছে অফিসের দিকে। কাছাকাছি আসতেই রাধা অবাক! এত শ্যাম! তার হাঁটাচলার সবই তার নখদর্পণে। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। শ্যাম তাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিল। তাহলে এতই যখন তার প্রেম তাহলে তাকে বিয়ে করল কেন, চিন্তা করে কূল পায় না রাধা বিমর্ষ হয়ে ভাবে,কি করবে এখন?
রাজু তার দিকে চেয়ে থাকে। বুঝতে পারে রাধার মনের অবস্থা। তবু তাকে কিছু না বলে দু'জনে প্রেমের অভিনয় শুরু করে পাশাপাশি বসে পার্কে। টিফিন হয়। আবার দেখে সেই দুইজন পার্কের এক কোনায় এসে বসে এবং কি যেন খেতে থাকে। দু'জন কি ঢলা-ঢলি! হাসিতে যেন ওদের মুখে খই ফুটছে। রাধার আর কিছু বুঝতে বাকি থাকে না। তার সব বোঝা সারা। এতদিন সে মিথ্যের ফাঁসে জীবনটাকে জলাঞ্জলি দিয়েছে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার চেতনা হয়, না এই ফাঁসে সে আটকে থাকবে না। মিথ্যে বিয়ের অভিনয় সে আর করবে না। পরমুহুর্তেই তারা পার্ক থেকে বেরিয়ে আসে।রাধা সোজা চলে আসে বাপের বাড়ি। রাজুও চলে যায় নিজের বাড়ি। মায়ের গলা জড়িয়ে রাধা বলে, মাগো তোমাকে ছেড়ে আমার শ্বশুর বাড়ি থাকতে ভালো লাগে না। মা আমি যদি তোমার কাছে চলে আসি, তুমি রাগ করবে না তো মা। আঁতকে উঠে তার মা।
"কি সব অলক্ষুনে কথা বলিস, রাধা। এসব কথা কি বলতে আছে,মা?"
আমরা গরীব মা। গরিবের সাথে গরিবের আত্মীয়তা হয়, বড়লোকের সাথে কি হয়? রাধার এই কথায় মা যেন আকাশ থেকে পড়ে।
"কেন, ওরা কি তোকে কষ্ট দেয়, মা?
না, না কষ্ট তেমন না কিন্তু খাওয়া-পরার কষ্টই কি শুধু কষ্ট? আমার কষ্ট যা তা তো আমি মেনে নিতে পারছি না মা। তার চেয়ে আমি যেমন আগে কাজ করে খেতাম ঠিক তেমনি তোমার কাছে এসেও আমি কাজ করে খাবো। আমার জন্য তোমার কোনো ঝামেলা ঝক্কি সামলাতে হবে না। তবুও এই খাওয়াতে আমার মান সম্মান থাকবে। অমন বড়লোকের বাড়ি অসম্মানের মাংস ভাত খাওয়ার চেয়ে আমার না খেয়ে থাকা ঢের ভালো, মা।
মেয়ের ইঙ্গিত মায়ের আর বুঝতে বাকি থাকে না। সেদিন রাধা ফিরে যায় শ্বশুর বাড়ি কিন্তু স্বামীকে ওইভাবে অন্য নারীর সঙ্গে মেলামেশা করতে দেখে সেই দৃশ্য সে ভুলতে পারে না কিছুতেই। বিনিদ্র রাত কাটায় এপাশ-ওপাশ করে। কিন্তু শ্যাম পাশে শুয়ে থেকেও একটিবারও রাধাকে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেনি তার ঘুম না আসার কারণ কি? বড় অসহায় লাগে রাধার। মনে মনে ভাবে এই বিয়ে তার না হলেই হয়ত ভালো হত অথচ সবাই জানে তার বড়লোকের ঘরে বিয়ে হয়েছে। স্বামী সরকারি চাকুরে। কত না সুখে আছে সে। আর মিথ্যের বোঝা বইবে না রাধা। তাই সকালে উঠেই অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে স্বামীকে বলে, আমি অভিনয় করতে করতে বড়ই ক্লান্ত। এবার আমি ছুটি চাই।
"কেন, তোমার খাওয়া-পরার কি কোনো অসুবিধা হচ্ছে?"জানতে চায় শ্যাম।
না, আমার খাওয়া-পরাতে কোনো অসুবিধে নেই কিন্তু আমার যা অসুবিধে তা তুমি কোনোদিনই সুবিধে করেতে পারবে না"।রাধার এই দৃঢ়তা দেখে শ্যাম অবাক। হঠাৎ রেগে বলে, বাহ, ভালোই তো তেজ বেড়েছে ? গরিব ঘরের মেয়ে। বড়লোকের ঘরের বউ হয়েছো, এতো সুখে আছো, তাতেও তোমার হচ্ছে না?" শ্যামের কথাগুলো যেন কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে রাধাকে।
আমার কিসে সুখ, কিসে দুঃখ, সেটা তো আগে তোমারই বোঝার কথা, জানার কথা। অথচ তুমি দিনের-পর-দিন মিথ্যে অভিনয় করে যাচ্ছো আমার সঙ্গে।
"বেশ করেছি, তুমি কি আমার যোগ্য? নেহাৎ বাবা-মা'র কথায় তোমাকে বিয়ে করেছিলাম কিন্তু বিয়ে মানে তুমি যা চাও, সেটা আমি কোনোদিনই তোমাকে দিতে পারবো না, পাল্টা জানিয়ে দেয় শ্যাম। আর কোনো কিছু বোঝার বাকি থাকে না রাধার। তাই সে বেরিয়ে আসে সন্ধ্যার আবছা আলোতে। শ্বশুর-শাশুড়ি ডাকলেও ফিরে তাকায়নি আর রাধা। কিছুটা হেঁটে ওঠে সবুজ মাঠে। তখন চারদিকে অস্তায়মান সূর্যের আলোয় যেন ভরে গেছে। সবুজের সুগন্ধ ভরে নেয় শ্বাস। আজ যেন তার পরম শান্তি। একটা মিথ্যে ফাঁসে আটকে ছিল খাঁচার পাখির মতো। এখন তার মনে কোনো পিছুটান নেই, নেই কোনো কষ্ট, নেই স্বামী সংসারের প্রতি কোনো আকর্ষণ। এবার সে মুক্ত বিহঙ্গ। পাখিরা তখন কিচিরমিচির করে উড়ে যাচ্ছে আপন নীড়ে। উপরে তাকিয়ে দেখে রাধা অসীম স্বাধীনতা, অসীম আনন্দ আকাশে বাতাসে, সেই আকাশে পাখির মতোই ডানা মেলতে আকুল রাধা।
গল্পটির রচনাকাল তাং--০৭-০৯-২০২১
Mithyar Fans Short Story
No comments:
Post a Comment
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.