Khushi Sarkar written Abhimanini Short Story - Nabo Mukul

Latest

Bengali poem, Short story, essay and modern poems as education base

31 May 2021

Khushi Sarkar written Abhimanini Short Story

Khushi Sarkar written Abhimanini Short Story.

Name of Short story- Abhimanini,
Time of Written- 2021-5-31,

Khushi Sarkar has written the short story Abhimanini.

A few words about the story of 'Abhimanini': -

This Abhimanini story is relevant in the present time. Education develops the latent qualities of the heart. It makes the student humane. But in the rat race of the competition, the students are not becoming human but mechanical. Losing respect and devotion to the elders. Not giving recognition. Gradually looking at the moral behavior lightly. As a result, there is disagreement with the parents on moral issues. Not only that, the fathers of the family are often fueling or indulging in this disagreement of the child.

The pain-ridden mother is often haughty in this disagreement. Personality is born from pride. And in the struggle of this personality he chooses a life free from bondage. This sensitive issue is highlighted in this story.

ছোটোগল্প--অভিমানিনী
গল্পকার - খুশী সরকার,

স্বপ্না বড় অভিমানে বসে আছে ঘরে। একটা চাপা কষ্টে চেয়ে আছে জানলার দিকে, দু'গাল বেয়ে ঝরে পড়ছে অশ্রু। উদাস মনে ভাবছে এখনকার সন্তান কেন এত বেশি রুক্ষ? মা-বাবাকে সম্মান তো দূরের কথা, ভালো ব্যবহারটুকুও করে না বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে। যে শিক্ষা নিয়ে আমরা এত বড়াই করি, ছয়-সাতটা গৃহশিক্ষক দিয়ে ছেলে-মেয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করাই, বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলি আমার ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষিত, সত্যিই কি তারা শিক্ষিত? সত্যিই কি আমরা তাদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারছি? মস্ত বইয়ের বোঝা তাদের পিঠে না দিয়ে বহন করি নিজেরাই, মা-পাখির মত শস্যদানা খুঁটে খুঁটে ওদের ঠোঁটের ভেতর পুরে দিই,আদর স্নেহ যত্নে বড় করি মা-পাখির চেয়ে আরও বেশি মানুষ হিসেবে তবুও তো সুব্যবহারে সমৃদ্ধ হচ্ছে না সিংহভাগ।

মনে হয় এরজন্য হয়তো দায়ী আমরা, মা-বাবাই। হয়তো যে শিক্ষা-দীক্ষায় তারা অবয়বে, শরীরে স্বাস্থ্যে সুস্থতা বা মজবুতি পায় কিন্তু সে শিক্ষা তাদের আত্মীকরণ হয় না। আমরা তো আমরা তাদের বইয়ের বোঝা বহন করি ভালোবেসে,যাতে তাদের এতটুকু কষ্ট না হয়। অথচ তারা ভেবে নেয়,এটা মা'দের কর্তব্য। মা-বাবা শুধু শ্রম দেবার জন্য, টাকা দেবার জন্য। তাদের থাকবে না কোনো প্রত্যাশা, শাসনের ক্ষমতা কিম্বা ভালো-মন্দ বিচার করার অধিকার।,স্বপ্নার আজ মনে হচ্ছে,এই যান্ত্রিক যুগে সব সম্পর্ক গুলোই যেন যন্ত্রের মতো ক্রমশঃ নীরস ও রুক্ষ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মা'র সঙ্গে সন্তানের যে প্রাণের সম্পর্ক, হৃদয়ের সম্পর্ক, তার কোথায় যেন একটা ফাটল ধরেছে। তাই ভালো ব্যবহারটুকুও পাওয়া যায় না আজ। তার নিজের উপর বড় অভিমান জন্মে। সত্যি হয়তো মেয়েকে শিক্ষা দিতে গোড়াতেই ভুল করেছে সে, কিন্তু পরক্ষণেই নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করে, অন্তত তার মতে, ভুল শিক্ষা তো সে দেয় নি কোনো দিনও।তাই হয়তো আজ তারই প্রাপ্য পুরস্কার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে পড়ে তার নিজের মায়ের মুখ। মা তার সহজ-সরল, লেখাপড়ায় ক-অক্ষর গোমাংস অথচ মা তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। পাঁচ ভাইবোন, বাবা-মা'র অভাবের সংসারে বড় কষ্টে বড় হয়েছে সে। সামান্যতম চাহিদাটুক‌ওু পূর্ণ হয়নি কোনোদিন। তবু যা পেয়েছে বড় আনন্দে গ্রহণ করেছে। পাঁচ ভাইবোনের সঙ্গে মিলেমিশে সব ভাগ করে খেয়েছে, বড়ো হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছে, ইচ্ছেমতো সুখ-সুবিধা না পাওয়ার জন্য এতোটুকু দোষারোপ কোনোদিন করেনি বাবা-মা'কে। আজ তার নিজের মেয়ে,একমাত্র মেয়ে, যাকে ঘিরে তার জীবনের আবর্তন বিবর্তন, সেই মেয়ে আজ বড় হয়ে তাকে এতোটুকু সম্মান দেয় না, শুধু তাই নয় ভালো ব্যবহারটুকুও করে না পর্যন্ত। দুঃখে অভিমানে স্বপ্নার চোখ জলে ভরে চারদিক ঝাপসা হয়ে আসে।

বারবার মনে পড়ে সময়ে কখনো তার মা-বাবার সঙ্গে মনান্তর বা মতান্তর হয়েছে কিন্তু নিছক এর সাময়িক তবুও কোনোদিনই  অসম্মান বা অপমান করার সাহস বা স্পর্ধা তার কোনো দিন হয়নি। বরং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার মাথা নত হয়ে আসে কারণ তারা তাদের যথাসাধ্য শিক্ষা দিয়েছেন বলেই আজ মানুষের মত মানুষ কিছুটা হলেও হতে পেরেছে। স্বপ্না ভাবে, সাধ্য বড় কথা নয়, বড় কথা তাদের সদিচ্ছা। সদিচ্ছা সবারই থাকে কমবেশি। হয়তো সাধ্যের কারণেই সব বাবা-মা'র পক্ষে সন্তানকে ইচ্ছে মতো শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না কিন্তু তারা সাধ্যমত চেষ্টা করেন, চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেন না। সেও এতোটুকু খামতি রাখেনি কোথাও। তবু কেন এত রুঢ় আচরণ?

সে তো মনেপ্রাণে জানে পড়াশোনা মানুষকে মানবিক করে, মনুষ্যত্বে উত্তীর্ণ করে। ডিগ্রী লাভ তো নিছকই স্বাক্ষর করা কাগজ মাত্র, আত্মতুষ্টির সম্বল। তাতো বাইরে ছাপ মারার বস্তু নয়, প্রকৃত শিক্ষার পরিচয় তার ব্যবহারে, আচার-আচরণে, ভদ্রতা বিনয়-নম্রতা শ্রদ্ধা ও ভক্তিতে। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হলে তা হৃদয়কে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে। কোনো বাধাই সেই আলোর গতিকে রুদ্ধ করতে পারে না, তা ফুটে বের হয়‌ই হয়। নিজের মনেই স্বপ্নার প্রশ্ন জাগে, তবে কি বর্তমান শিক্ষা শুধু টাকা রোজগারের জন্য? নিজের স্বার্থ পূরণের জন্য?

উত্তর খুঁজে পায় নিজের অজান্তে। তবে এই বস্তাপঁচা ঘূণ ধরা শিক্ষায় কি লাভ? সন্তানদের সুশিক্ষিত করেও যদি ব্যবহারে তারা নির্মম হয় এবং বাক্যের ধার তীক্ষ্ম মর্মভেদী হয়ে ওঠে তাহলে তো অশিক্ষিত থাকা ঢের ভালো আর কিছু না হোক কিছুটা হলেও তারা ব্যবহারে এত রুঢ় কিম্বা এত স্বার্থপর হয় না।মনে মনে ভাবে, সে তো তাঁর সন্তানের সঙ্গে এমন কোনো আচরণ বা ব্যবহার করেনি যা তাকে অমানবিক করে তুলতে পারে। ভেবে ভেবে তার শরীর-মন হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে দিশাহীন হয়ে পড়ে। কি করবে সে? অবাধ্য সন্তানকে প্রশ্রয় দেবে নাকি  যথাযোগ্য উত্তর দিয়ে তাকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করবে? হঠাৎ দেখে চারদিক অন্ধকার। অমনি বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। আকাশের দিকে চেয়ে থাকে, মেঘলা আকাশ, থমথমে পরিবেশ যেন ঝড়ের ইঙ্গিত। আকাশে পাখির ঝাঁক রুদ্ধশ্বাসে উড়ে চলেছে নীড় মুখে। প্রলয় বেগে ছুটে আসছে বাতাস। শুরু হয় প্রবল ঝড়। বুকের ভেতরটা যেন তোলপাড় করে স্বপ্নার। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে তার মনের ভূমিতেও। বারবার মনে পড়ে তারা একমাত্র মেয়ে, তার স্বপ্ন। তাকে ঘিরেই ঋতুতে ঋতুতে সেজে ওঠে তার জীবন। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের আঁচ এত টুকু লাগতে দেয়নি কোনোদিন মেয়ের গায়ে। ওকে গড়তে চেয়েছে ওর ইচ্ছেমতো। যখন যা চেয়েছে, যা হতে চেয়েছে তেমনি দিয়েছে তার পুষ্টি তুষ্টি, তা-ই হতে সাহায্য করেছে।

অবশ্য স্বীকার করে সন্তানের বড় হওয়ার কৃতিত্ব সন্তানেরই। কারণ সে চেয়েছে হতে,তাই হয়েছে। তাই বলে কি তার জীবনে বা মায়ের কোনো ভূমিকা নেই? নেই কোনো শ্রমের মূল্য? সবচেয়ে বড় কথা মায়ের স্নেহ, আদর-যত্ন ভালোবাসাকে কি কোনো সংখ্যায় বোঝানো যায়? নাকি পরিমাণে মাপা যায়? স্বপ্না ভেবে কুল পায় না।

হঠাৎ আরো জোড়ে বৃষ্টি নামে। চারিদিক অন্ধকারে ঢেকে যায়। অবিরাম ভাবনায় স্বপ্নার শরীর-মন চৈত্রের খরার মতো ফাটলে ফাটলে চৌচির হয়ে চায় একটু শীতল পরশ। ইচ্ছে হয় তার এই বৃষ্টিতে ভিজে তার অন্তরের জ্বালা পোড়াকে শীতল করতে। তাই কাউকে না জানিয়ে সে চলে যায় ছাদে। অনেকক্ষণ ধরে ভিজতে থাকে তুমুল বৃষ্টি ধারায়। একসময় বৃষ্টির শব্দ ভেদ করে তার কানে পৌঁছায় 'মা' 'মা' ডাক। নিজের অজান্তেই কান খাড়া হয়ে যায় তার, বুকটা হঠাৎ যেন কেঁপে ওঠে অজানা আশঙ্কায়। কেমন যেন কষ্ট অনুভব হয় তার। ভিজে শরীরেই দুম দাম নেমে আসে সিঁড়ি বেয়ে, বাইরে কাউকে দেখতে না পেয়ে ঢুকে পরে মেয়ের ঘরে। আশঙ্কিত মনে জিজ্ঞেস করে, কিরে তুই ডাকছিলি?

--- হ্যাঁ, কাঁদো কাঁদো স্বরে মেয়ে জানাই।

 মেয়ের কান্নার স্বরে স্বপ্নার হৃদয়ের সমস্ত জ্বালা যেন উবে যায় মুহূর্তে কর্পূরের মতো। যেন মাতৃত্ব টনটন করে জেগে ওঠে। সন্তানের জন্য তার হৃদয় খনিতে এত স্নেহ স্তুপীকৃত ছিল, সে আজ প্রথম অনুভব করলো। নিজেরই অজান্তেই সেই স্তুপীকৃত অপত্যস্নেহ একটি মাত্র শব্দেই বরফের মতো গলে জল হয়ে গেল আর তীব্রবেগে ঝর্ণাধারায় সঞ্চিত দুঃখ ক্ষোভ অভিমান---- সব ধুয়ে গেল।

'কাঁদার মতো তো কিছু হয়নি'----গাম্ভীর্যের মোরকে বলে স্বপ্না।

--- তোমাকে অনেকক্ষণ দেখতে পাচ্ছিলাম না,তাই,---- ছাদেই তো ছিলাম। বলেই স্বপ্না বেরিয়ে আসে ঘর থেকে।আসতে আসতে ভাবে একেই কি বলে মাতৃত্বের টান?

কিন্তু পরক্ষণেই চোয়াল শক্ত হয় তার। দৃপ্ত মনে ভাবে না, আর নয়।মেয়ের ইচ্ছা বিরোধী কোনো কথা বা কাজ হলেই সে ইলাস্টিকের আচরণ করে। নিরন্তর কথায়,কথায় অপমান করে,আঘাত করে।

অথচ অনুরূপ আচরণের জন্য এতটুকুও অনুতাপ নেই তার। বরং একটা বদ্ধ ধারণা জন্মেছে, মাকে যা খুশি বলা যায়, মায়ের সঙ্গে যেমন খুশি ব্যবহার করা যায়। বরং স্বপ্নার বিস্ময় জাগে যে এই মেয়ে তার সেই মেয়ে, যে মেয়েকে সে এতদিন হৃদয় উজার করা ভালোবাসায় সিক্ত করেছে। চেষ্টা করেছিল চেষ্টা করেছে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পথ দেখাতে এবং যাতে সে মানুষের মত প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে সেই জন্য। সে তাকে সব শিক্ষা দিতে চেষ্টা করেছে। আজ মনে হচ্ছে যেন তার ধারণা সব ভুল। সে নিজে জানে পুঁথিগত বিদ্যাকে যদি আপন চরিত্রে প্রয়োগ না করা যায় যদি প্রকৃত শিক্ষা লাভ করে আদর্শ মানুষ হয়ে তৈরি না হওয়া যায় তবে সে শিক্ষার কোনো মূল্য নেই।আর এই পুঁথিগত শিক্ষা নিয়েই যেন শিষ্টাচার সৌজন্যতা,মান্যতা শ্রদ্ধা--- সব ভুলে যাচ্ছে তার মেয়ে।

স্বপ্না ভাবে স্বামী সন্তান সংসার যতই তার পরম কাঙ্ক্ষিত হোক তবু তার উপরে এমন কোনো সম্পর্ক আছে যার জন্য এ-সব কিছুই ত্যাগ করা যায় অতি সহজে।

মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, যে স্বামী সন্তান তার মূল্য দেয় না, তার অস্তিত্বের বিপন্নতাকে ডেকে আনে সেখানে আর যাই হোক, থাকা যায় না। তাই সে স্থির করে এবার আর কারো কথা নয়, এবার শুধু ভাববে নিজের কথা, নিজের অস্তিত্বের কথা, নিজের মুক্তির কথা। সে স্থির হয়ে দৃঢ়কণ্ঠে সতীশকে জানাই, আমি চললাম। তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে থাকো। আর কোনোদিন ডেকো না আমায়---- বলতে বলতেই বেরিয়ে আসে খোলা আকাশের নিচে। উপরে তাকিয়ে দেখে আকাশের মেঘলা ভাব কেটে গেছে। স্বচ্ছ নীল আকাশে রবি পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিচ্ছে মুক্তির স্বচ্ছ আলো। এই আলোয় ভিজে এক ঝাঁক বলাকা জীবনের উল্লাসে ডানা মেলে উড়ে চলেছে দিগন্তে।

No comments:

Post a Comment