Maa Short Story by Khushi Sarkar - Nabo Mukul

Latest

Bengali poem, Short story, essay and modern poems as education base

4 Aug 2021

Maa Short Story by Khushi Sarkar

 ছোটগল্প মা লেখিকা খুশি সরকার দ্বারা রচিত।



'মা' ছোট গল্প লিখেছেন লেখিকা খুশী সরকার।


বিকেলের পড়ন্ত রোদে গাছপালার মুখে মলিন হাসির দিকে তাকিয়েই আরতি আতঙ্কিত দৃষ্টিতে বলে, এখনো আসছে না কেন? অন্য দিন তো চলে আসে! অমনি আনন্দকে দেখতে পায় ব্যাগ হাতে আসতে।

--কিগো, এত দেরী হল যে? 

--হঠাৎ একটা কাজ পড়ে গিয়েছিল, তাই।

---ও-ও তাই ! তুমি এখন চেঞ্জ করে নাও, হাত পা ধুয়ে এসো। আমি প্রদীপ জ্বালিয়ে চা বানাচ্ছি।

হাত মুখ ধুয়ে আনন্দ সোফায় বসতেই জিজ্ঞাসা করে, বুবুন কোথায়? ওকে দেখছি না যে--

--ও খেলতে গেছে। এখুনি আসবে। আরতি চায়ের প্লেট ধরিয়ে বলে, আগে চা-টা খেয়ে নাও। ও ভালো কথা-- তোমাকে একটি কাজের মেয়ের কথা বলেছিলাম, 

পেয়েছো?

আনন্দ মাথা নেড়ে বলে, হ্যাঁ, কাল আসবে।

পরদিন সকালে আনন্দ বাজারে যেতেই দেখলো, সেই লোকটি এসেছে।

শুনছো -- তোমার লোক। রান্নাঘর থেকেই আরতি  'আসছি' বলতেই দেখে একটি শীর্ণকায় বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে। আরতি বলে, একি, এ মেয়ে নাকি?

---আরে না, না। উনার মেয়ে আছে।

---তা-ই বলো।

--- আপনার মেয়ে ক‌ই ?

---আজ্ঞে, আগে একটু কথা সেরে নিলে হয় না?

---আগে আপনার মেয়েকে আনুন,তবেই---- 

---ঠিক আছে মা, কাল‌ই আনবো। আসি।

পরের দিন যথারীতি বুড়ো মেয়েকে নিয়ে হাজির। আরতি মুখের হাসিতে বলে,

ওমা কি সুন্দর মেয়ে!তোমার নাম কি?

---বিন্নি। তাহলে ওকে রেখে যাই ?

---টাকা নিয়ে চিন্তা করবেন না, ও মেয়ের মতোই থাকবে।

---খুব উপকার করলে, মা। ঠিকমত খেতে দিতে পারি না। হতভাগ্য বাপ!


---বিন্নি,তোমার কে কে আছে? 

---বাবা-মা ও ভাই। আমরা খুব গরিব। আমার ভায়ের বড় অসুখ, বলতেই চোখ ছলছল করে। 

--বোকা মেয়ে, কাঁদিস কেন, চিকিৎসা করলেই সুস্থ হয়ে যাবে।


ছয় মাস পেরিয়ে যায়। বিন্নি মেয়ের মতোই আছে, বুবুনের  খেলার সাথী । আনন্দও ভালোবাসে বিন্নিকে। 

সেদিন দুপুরে বিন্নি শুয়েছিল বারান্দায় মাদুর পেতে। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলতেই চিৎকার করে বলে, মা-আ, তুমি এসেছো? জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি ভালো আছো মা? বাবা? ভায়ের অসুখ সেরেছে?

--কার সঙ্গে কথা বলিস বিন্নি ? ঘুম জড়ানো স্বরে জিজ্ঞেস করে আরতি।

--আমার মা এসেছে গো দিদি।

--ও তা-ই! তাই এত আনন্দ! বসতে বল্, আসছি।

--মা, মেয়েকে ধরে তাকিয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে।  কত কথা মনে পড়ছে আজ। সেই ছোট্টবেলা কত কষ্ট করে বড় করেছে দুই ছেলে- মেয়েকে।  তবুও আনন্দ ছিল সংসারে--দু'গাল বেয়ে জল পড়ে। বিন্নির চোখেও জল। ও- মা, কাঁদছো কেন? এই দেখো, আমি ভালো আছি। ও- মা,  ভায়ের জ্বর সেরেছে? সম্বিত ফিরে পেয়ে বিন্নির মা বলে, না রে, মা। ভাইয়ের জ্বরটা আরো বেড়েছে।


আরতি বলে, মেয়েকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল বুঝি?

---টাকার খুব দরকার। ছেলেটার জ্বরটা আরো বেড়েছে, তাই তোমরা যদি একটু দয়া----- 

আসলে ছেলেটাকে বড়ো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।

---কিন্ত আনন্দ তো রাত্রে ফিরবে। আজ এখানে থাকুন।

---বাড়িতেও অসুবিধা। তবুও-----

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিন্নির মা।


রাত্রে আনন্দ অফিস থেকে ফিরে চেঞ্জ করে ডাইনিং টেবিলে বসলে বিন্নির মা টাকার কথা বলে। টাকার কথা শুনে আনন্দ একটু থেমেই বলে,এই মাসে একটু অসুবিধা আছে, সামনে মাসে দিয়ে দিব। 

---আমার যে কোনো উপায় নেই,বাবা। আমাকে যেকোনো ভাবে জোগাড় করে দাও।

--না, না। কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

বিন্নির মায়ের মুখটা মলিন হয়ে যায়। বিন্নিকে ডেকে আরতি বলে, মাকে তোর ঘরে নিয়ে যা।


পরের দিন খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠে বিন্নির মা।

চা খেয়ে আরতিকে বলে,আজ তবে যাই, মা।

আরতি বিন্নির মায়ের উস্কোখুস্কো চুল দেখে বিন্নিকে বলে,যা তোর মা'কে ঘরে নিয়ে গিয়ে চুলটা চিরুনী দিয়ে আঁচড়ে দে। 

ঘরে নিয়ে গিয়ে বিন্নি ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলে, ঐ যে চিরুনি, তুমি আঁচড়াও,আমি তোমার শাড়িটা ঠিক করে দিই। চিরুনী নিতেই চোখে পড়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা আংটিটা। বুকের রক্ত ছলকে ওঠে বিন্নির মায়ের। মনে পড়ে মুমূর্ষ ছেলেটার মুখ। অমনি খপ্ করে আংটিটা রুমালে পুরে নিয়ে চলে যায়।


সাড়ে নয়টার সময় আনন্দের হঠাৎ মনে পড়ে আংটিটার কথা। বিন্নিকে বলে,যা ড্রেসিং টেবিলের উপর আ়ংটিটা আছে, নিয়ে আয়। কিন্তু অনেক খুঁজেও পায় না। আরতি শুনে চিৎকার করে বলে,ঐ সোনার আংটিটা?নিশ্চয় কোথাও ফেলে দিয়েছো, ঘরে রাখলে তো পেত। ইস্------

কিন্তু আনন্দ নিশ্চিত করে বলে, ড্রেসিং টেবিলের উপরেই রেখেছিলাম।


দুইদিন পর,আনন্দ একটা উপরি পাওয়া টাকায় রাস্তার মোড়ের সোনার দোকানে আংটি কিনতে যায় রাতে। গিয়ে দেখে, দোকানদার টাকা গুনতে ব্যস্ত। পাশের বেঞ্চে বসে আছে ঘোমটা টেনে এক মহিলা। দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দোকানদার ইশারায় আনন্দকে বেঞ্চে বসতে বলে। বসতেই দোকানদার টাকাটা এগিয়ে দেয় মহিলার দিকে। টাকা নিতে দেখেই চক্ষু চড়কগাছ। দুই চোখ বিস্ফারিত করে বলে,বিন্নির মা যে, কী ব্যাপার? ছেলে কেমন আছে?

তোৎলাতে তোৎলাতে বিন্নির মা বলে, ও-ও, বাবা তুমি-ই।

ছেলেকে ডাক্তার দেখানোর জন্য টাকা নিতে এসেছি।

--সোনাদানা কিছু বিক্রি করলেন নাকি?

দোকানদার সৌৎসাহে বলে, আরে মশাই, সেকালের একটি ভারী আংটি বিক্রি করল।

--কপালে চোখ তুলে আনন্দ বলে, তা-ই নাকি! তা, আংটিটা দেখান তো?

--কী মশাই, নেবেন না কি? বলেই ড্রয়ার থেকে বের করে দেখান দোকানদার। আংটি দেখেই আনন্দ মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বলে, হ্যাঁ--এ, আমার সন্দেহ মিথ্যে নয়। ঠিক ধরেছি,ঐ মেয়েই এ কাজ করেছে। পুলিশে খবর দিই, পুলিশের কাছেই সব স্বীকার করবে।


বিন্নির মা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হঠাৎ ধপ্ করে বসে পড়ে আনন্দের পায়ের কাছে, কান্নায় ভেঙে পড়ে, বাবা, আমার মেয়ে নয়, আমিই করেছি এ কাজ। যা শাস্তি দেবার আমাকেই দাও, বাবা। আমার মেয়েটাকে দিও না। এক ঝটকায় পা ছাড়িয়ে আনন্দ বেরিয়ে যায়।

--এই বদমাইশ মেয়েছেলে, দাও আমার টাকাটা? দাও বলছি? বিন্নির মায়ের হাত থেকে দোকানদার খপ্ করে নিয়ে  নেয় টাকাটা। চোখের জল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে বিন্নির মা মোটা গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে। কষ্টে যেন প্রাণটা বেরিয়ে আসতে চাইছিল তার। কোন মুখে সে এখন বাড়ি যাবে? লজ্জায়, ঘৃণায় দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছে করছিল তার। কিন্তু সে মরে গেলে যে ছেলেটাও মরে যাবে, এভাবে নানা ভাবনা চিন্তায় রাত শেষ হয়ে আসে। ছেলের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই করতে পারল না এত চেষ্টা করেও, বুকের মধ্যে নিজের অক্ষমতা যত‌ই তীরের মত বিঁধছিল ততোই চোখ দিয়ে অনর্গল ঝরছিল জল। বারবার তার মনে হচ্ছিল বিন্নির বাবা পথ চেয়ে বসে আছে তার আশায়। এভাবেই ভাবতে ভাবতে দেখে কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরেই প্রচন্ড বৃষ্টি । সেই বৃষ্টিতেই উঠে দাঁড়ায় বিন্নির মা। হঠাৎ একটা পুলিশের গাড়ি সজোরে বেরিয়ে যায় তার সামনে দিয়ে। বৃষ্টি ভেজা আবছা কাচে দেখতে পায় বিন্নি কাঁদছে, হাতে হাতকড়া। প্রাণপণ আর্তচিৎকারে দৌড়াতে থাকে গাড়ির পিছন পিছন। 

হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় মুখ থুবরে। 


No comments:

Post a Comment

Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.