Nijer Bari (Own House) Short Story by Khushi Sarkar - Nabo Mukul

Latest

Bengali poem, Short story, essay and modern poems as education base

31 Mar 2020

Nijer Bari (Own House) Short Story by Khushi Sarkar

Nijer Bari (Own House) Short Story by Khushi Sarkar

Coronavirus মহামারী প্রতিরোধে দেশজুড়ে লকডাউনের ফলে আঁটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকের জীবন অবলম্বনে রচিত এই ছোট গল্পটি। This is a short story about the lives of migrant workers trapped in a nationwide lockdown to prevent the coronavirus epidemic.

গল্পের নাম - নিজের বাড়ি (Own House)

লেখিকা - খুশী সরকার।

Nijer Bari (Own House) Short Story by Khushi Sarkar.

হঠাৎ সেলিম চেঁচিয়ে বলে, এখানে কি পচে মরবো নাকি? তোরা থাক্, আমি দেখি কোনো ব্যবস্থা করতে পারি কিনা?
শান্ত স্বরে রহিম আশ্বস্ত করবার জন্য সেলিমের দিকে তাকিয়ে বলে, ব্যবস্থা করা কি খুব সহজ হবে, ভাবছিস? দু -একটা দিন অপেক্ষা কর না, কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই।
সেলিম একটু শান্ত হয়। নরম সুরে বলে, তাহলে কি করে ফিরবো আমরা? তোমরা বুঝতে পারছো না, বাড়িতে যাওয়া আমার ভীষণ প্রয়োজন, কয়দিন ধরেই তো বলছি, তোমরা শুধু অপেক্ষা করতে বলছো অথচ যবে থেকে বলছি তখন ট্রেন চলছিল, বাস‌ও ছিল, আর রোগটা তেমন ছড়ায়‌ও নি।

কিন্তু কি ফল হলো এখন? উল্টো। বরং এখন যাওয়া অসম্ভব‌ই হয়ে গেল। রাস্তাঘাট, দোকানপাট সব বন্ধ। আর যদি কোনোভাবে যাই‌ও, তাহলে ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরেছি শুনে পুলিশ সোজা নিয়ে যাবে হাসপাতালে।, সুস্থ প্রমাণ হলে তবেই ছাড়, না হলে কয়রানটিন না কি যেন বলে, ওখানে ঢুকিয়ে দেবে, থাকতে হবে আরও 14 দিন। পরক্ষণেই আবদারের স্বরে হাকিমকে বলে, দুলা ভাই আপনিই বলেন, কি করবো মোসেদার তো শরীরটা ভালো না, এর মধ্যেই হবে হয়তো, ও আমাকে বারবার করে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে বলেছিল। হাকিম বলে ওঠে, আমরা এর মধ্যেই সবাই একসঙ্গে যাবো, হয় মরবো নয় বাঁচবো।
কিন্তু সেলিমের মন কিছুতেই বোঝে না, মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে সে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি হয়।

হঠাৎ তার মাথায় জেদ চেপে বসে,আমি আর ওদের কথা শুনবো না, আমি একাই রওনা দিবো। লকডাউন শুরু হয়ে কোনো কাজকর্ম নেই। রাতে সবাই আলু সিদ্ধ ভাত খেয়ে শুয়ে পড়ে কিন্তু সেলিমের চোখে ঘুম নেই। রাত যখন গভীর হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি আসে, এখনই বেরিয়ে পড়ি, চারদিক তাকিয়ে দেখে সবাই ঘুমোচ্ছে। নিস্তব্ধ চারদিক। আস্তে আস্তে দরজা খুলে বাইরে আসে সেলিম। তাদের বাসার সামনে চায়ের দোকানটা পড়ে আছে একাকী, নিস্তব্ধ রাস্তায় পা টিপে টিপে বের হয় সে। রাস্তার কুকুরগুলো নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে। এবার জোরে জোরে পা চালিয়ে সারারাত ধরে হাঁটতে থাকে। ভোর হয়ে আসে, উঠে পড়ে বড় রাস্তায়, হঠাৎ দেখতে পায়, একটি ধাবায় দাঁড়িয়ে আছে একটি মাল বোঝাই ট্রাক। ট্রাকের ড্রাইভার খালাসী সবাই ধাবায় খেতে ব্যস্ত,আড়চোখে দেখে সেলিম উঠে পড়ে সেই ট্রাকে এবং মাল ঢাকা ত্রিপলের ভিতর ঢুকে পড়ে কোনোমতে। সে ট্রাক সারাদিন চলার পর থামে চেন্নাইয়ের একটি কারখানায়। ড্রাইভার যখন ট্রাকের মাল নামানোর জন্য কারখানার মালিকের সঙ্গে কথা বলছিল, সেই সুযোগে সেলিম ট্রাক থেকে নেমে দৌড় দেয়। দৌড়াতে দৌড়াতে আবার বড় রাস্তায় উঠে পড়ে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর দেখতে পাই একটি খালি ট্রাক তার অভিমুখেই প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে আসছে। অমনি সেলিম হাত নাড়াতে শুরু করে, ইশারায় হাতজোড় করে, তারপর দেখে ট্রাকটি তার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং ড্রাইভার ইঙ্গিতে গাড়িতে উঠতে বলে। পেছনের খালি অংশে উঠে পড়ে সে। উঠেই তার চক্ষু চড়কগাছ। ওখানে আর একজন কে যেন গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে, চোখ মুখ ঢেকে। সেলিমের ভয় করতে লাগলো। একি মরা মানুষ, নাকি জ্যান্ত ! তারপরই একটু তাকিয়ে থাকতেই দেখে লোকটি নড়ে উঠল। একটু আশ্বস্ত হল। অন্য কোণে বসে সেলিম ভাবছে, এই ট্রাক কোথায় বা যাবে, কেমন করেই বা বাড়ি পৌঁছাবে? এই লোকটাই বা কে, ভালো না মন্দ, যদি মেরে দেয় তাকে ? পরক্ষনেই যেন আপনিই তার মন বলে উঠলো, যা থাকে কপালে। আমি বাড়ি যাবোই। ততক্ষণে লোকটি উঠে বসে, তার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ বলে ওঠে, তুমি কে ভাই, এখানে কি করে? সেলিম কাঁচুমাচু মুখে বলে, ভাই, আমি খুব বিপদে পড়েছি। আমি কাজ করতে কেরলে গেছিলাম, দেশের এই লকডাউনে কোনো গাড়ি নেই কিন্তু বাড়িতে আমার বউ পোয়াতি,আমাকে বাড়িতে ফিরতেই হবে,তাই শেষ পর্যন্ত এই ভাবে। সেলিম এবার একটু সাহস পেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, তুমিই বা এভাবে কেন? লোকটা সঙ্গে সঙ্গে নিঃসঙ্কোচে বলে, আর বলো না ভাই, আমারও তোমার মতই অবস্থা। আমিও কাজ করতে গেছিলাম দিল্লি। ওখানে ব্যাপকভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আমার দলের কয়েকজনের‌ও করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। তাই আমি পালিয়ে এসেছি। আমার বাড়িতে বুড়া বাপ-মা, বউ, বাচ্চা আছে। তাই কোনো কিছু চিন্তা না করেই আমি একাই পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছিলাম তারপরে এই খালি ট্রাকটা পেয়ে উঠে যাই।

---এইভাবে গুটি মেরে শুয়ে আছো কেন? এখানে তো আর কেউ নেই।
---আরে ভাই কি বলবো, আমার দলের কয়েকজনের‌ করোনা ধরা পরার পর থেকে দুই রাত আমার ঘুম হয়নি। ওই দু রাত শুধু জেগেই কাটিয়েছি। আজ শরীরটা আবার একটু গরম হয়েছে, জ্বর আসবে নাকি? সেলিম তো ভয়ে আঁৎকে ওঠে, মনে মনে ভাবে, কি করব এবার? যদি করোনা ভাইরাস হয়ে থাকে ওর ! দলের লোকজনের তো হয়েছে, করোনা তো ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে, তাহলে ? গুম মেরে বসে থাকে সেলিম, হাজারো প্রশ্ন মাথায় ভিড় করে তার। ভাবে, এখান থেকে যদি পালিয়েও যাই, তাহলে যাবোই বা কোথায়? কেমন করেই বা বাড়ি পৌঁছাবো ?
লোকটি এবার উঠে বসে। সেলিমের দিকে কৌতূুহলী দৃষ্টি দিয়ে বলে, অত ভাবছো কি? আরে ভাই, আমার কিছু হয় নাই। বাড়িতে গেলেই ঠিক হয়ে যাবো। সেলিম একটু আশ্বস্ত হয়ে বলে , তোমার বাড়ি কোথায়?

--- ওইতো, পশ্চিম বর্ধমানের ভিতরে, একটি গ্রামে।
-- তোমার নাম কি?
----- নরেন। মানে নরেন মন্ডল।
সঙ্গে সঙ্গে সেলিম‌কে‌ও জিজ্ঞাসা করে, আর তোমার বাড়ি কোথায়, ভাই? নামটাই বা কি?

----আমারও বাড়ি বর্ধমান, তবে পশ্চিম নয় , পূর্ব বর্ধমানে। স্টেশন থেকে পাঁচ মাইল ভিতরে, একটি ছোট গ্রামে। আমি খুব গরিব মানুষ। নাম সেলিম শেখ। আমার বাপ মা তো মরে গেছে কবেই, শুধু বউটা, এখন ও পোয়াতি। টাকার বড় দরকার, আর আজকাল তো জানোই, বাচ্চা জন্মানোর সময় কম করে 20-25 হাজার টাকা দরকার। তাই এই টাকা রোজগারের জন্যই ভাই কেরলে গেছিলাম কিন্তু দেখো, কি বিপদে পড়ে গেছি। বড় চিন্তায় আছি। আচ্ছা ভাই, আমার কথা তো শুনলে, এখন তোমারটা শোনাও। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নরেন বলে,আমারও তোমার মতোই অবস্থা, তবে তোমার মতো আমার বাড়িতে পোয়াতি বউ নেই কিন্তু বুড়ো বাপ মা আছে। বাবার সুগার, প্রেসারের রুগি, মা চোখে খুব একটা দেখে না, বয়স‌ও হয়েছে প্রায় সত্তুর-পঁচাত্তুরের কাছাকাছি দুজনের। বউ এবং এক ছেলে মেয়ে তারাও আছে আর রোজগেরে শুধু আমি। এতগুলো পেট চালাতে ভাই হিমশিম খাচ্ছি, কি করব বলো? তাই বাধ্য হয়েই দিল্লি গেলাম কিন্তু 'অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়' এ কথাগুলো আমাদের গ্রামে বলে অনেকেই। এখন মনে হচ্ছে কথাগুলো সত্যি, মিথ্যা নয়। হঠাৎ গাড়ি থেমে যায়, চমকে উঠে দুজনেই, কি হলো! মুখ বাড়িয়ে উঁকি দিতেই দেখে দুজন সাদা পোশাকের পুলিশ হাতে লাঠি নিয়ে এবং কোমরে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে ড্রাইভারকে বলছে, গাড়ির সার্চ করবো আমরা, দেখি কি আছে গাড়িতে?
নরেন দেখতে পেল ড্রাইভার কি যেন ইশারা করলো পুলিশকে এবং সঙ্গে সঙ্গে নেমে পেছনের পাল্লাটা খুলে দিল। কি করবো, ভেবে না পেয়ে আমরা উঠে দাঁড়ালাম। অ্যাই, নেমে আয়, বলেই এক ধমক দিল পুলিশ। নামতেই খপ্ করে দুজনকেই ধরে নিল। ধমক দিয়ে বলল, কোথা থেকে আসছিস তোরা?

---আমি কেরল থেকে।
---নাম কি? বাড়ি কোথায়?
----সেলিম শেখ। পূর্ব বর্ধমান।
এবার নরেনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, তুই কোথায় গেছিলি?
----দিল্লিতে কাজ করতে স্যার।
----বাড়ি কোথায়?কি নাম?
---পশ্চিম বর্ধমান
চল গাড়িতে ওঠ, তোদের হাসপাতালে যেতে হবে।
দুজনেই ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বলে, কেন স্যার?

--ও - ও, কচি খোকা-আ, কিচ্ছুটি জানিস না, না? কেরালা আর দিল্লি থেকে আমাদের জন্য কি উপহার এনেছিস, দেখতে হবে না? বাধ্য হয়ে গাড়িতে উঠতে হলো। দশ মিনিট গাড়ি চলার পর একটি ফাঁকা জায়গায় একটি পাকা বাড়ির সামনে পুলিশ ভ্যানটি দাঁড়ালো। আমাদের দুজনকে ধরে ঢুকিয়ে দিলো সেই বাড়ির একটি ঘরে আর বলল 14 দিন এখানেই থাকবি। তোদের রক্ত পরীক্ষা হবে, যদি পরীক্ষায় করোনাভাইরাস না পাওয়া যায় তাহলে ছেড়ে দেয়া হবে, আপন আপন বাড়ি চলে যাবি। সেলিম আর ধৈর্য্য রাখতে পারে না। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, হে আল্লাহ, গরীবের উপর কি তোমার মমতা নেই?

নরেনও পরিবারের লোকজনের জন্য চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। কিন্তু অসহায়। রাত্রি হয় ।মাক্স ও গ্লাভসে মুখ,হাত ঢেকে একটি কেয়ারটেকার ছেলে এসে তাদের সব জিনিসপত্র দিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায়,কোনো অসুবিধা হলে টহলদারকে বলতে, টহলদার ওকে ডেকে দেবে, বলেই দরজা লাগিয়ে চলে যায়।
বড্ড অসহায় লাগছিল সেলিমের । মোসেদার কাছে যাওয়ার জন্য তার মন ছটফট করছিল। উদ্বিগ্ন হয়ে শুধু বারবার জানালার ফাঁক দিয়ে দেখছিল বাইরেটা উদাসীন ভাবে।
সেলিমের উদ্বিগ্ন অবস্থা দেখে নরেন তাকে শান্ত্বনা দিয়ে বলে, ভাই অতো ভেবো না, দেখবে ঈশ্বর তোমার স্ত্রীকে ভালো রাখবেন।
---আচ্ছা বলতো ভাই, নরেন, আমরা অতি গরিব মানুষ, আমাদের উপরই সব দুঃখ কষ্ট আল্লাহ ঢেলে দিয়েছেন? আল্লাহ কি কোনোদিনও আমাদের রেহেম করবেন না?
---ভাই, সবই কপালের দোষ। কপালে দুঃখ দুর্দশা থাকলে কেউ খন্ডাতে পারে না। দেখি আর কত কষ্ট দেয়,ঈশ্বর, সয়ে যাই।
---কিন্তু আমি আর পারব না ভাই। তুমি আমার এখান থেকে বার হওয়ার একটা ব্যবস্থা করতে পারবে?, যদি পারো উপকার হয়। তোমার এই উপকারের কথা আমি কোনোদিন ভুলবো না। আমার মোসেদা এতদিন খবর না পেয়ে মরেই যাবে, তাছাড়া ওর এই সময় আমার ওর পাশে থাকা দরকার কিনা, বলো ভাই?
---হ্যাঁ, তা তো বটেই, ভাই সব বুঝছি। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নরেন বলে, আচ্ছা দেখি কিছু একটা ব্যবস্থা করা যায় কিনা। কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থেকে হঠাৎ বলে ওঠে, একটা প্ল্যান এসেছে আমার মাথায় ভাই। গভীর রাতে টহলদার যখন ঘুমিয়ে পড়বে, তখন আমি মশা মশা বলে দরজায় ধাক্কা দেবো। ঠিক তখনই কেয়ারটেকার ছেলেটা এসে যখন মশারি দিতে ঘরে ঢুকবে তখনই তুমি ওই ফাঁকে দৌড়ে পালাবে। সব বুঝতে পেরেছো তো ?
---হ্যাঁ, তা তো বুঝলাম। তখন সেলিম ভীত স্বরে বলে ওঠে, আর তুমি?
তোমাকে যদি ওরা আরও শাস্তি দেয়। নরেন হাসিমুখে বলে, ও তুমি আমার কথা ভেবো না, আমি ঠিক বাঁচিয়ে নিব নিজেকে, তুমি তো তোমার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর কাছে যেতে পারবে, এটাই আমার শান্তি।
দুজনেই জেগে আছে, কারো চোখে ঘুম নেই। তারপর সেই প্ল্যান অনুযায়ী রাত্রি গভীর হলে নরেন পা টিপে টিপে জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে নেয়, টহলদার ঘুমিয়ে পড়েছে। অমনি মশা মশা বলে দরজায় ধাক্কা মারতে থাকে। পাশের ঘরে থাকা কেয়ারটেকার ছেলেটা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে, কি চায় আপনাদের?
---বড্ড মশা, ঘুমাতে পারছি না। একটা মশারি হবে ?
---ঠিক আছে, এনে দিচ্ছি, বলেই ছেলেটা কিছু ক্ষণের মধ্যেই একটা মশারি নিয়ে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো। সেই ফাঁকেই সেলিম দিল দৌড়। সঙ্গে সঙ্গে কেয়ারটেকার ছেলেটি পালিয়ে গেলো, পালিয়ে গেলো, বলে চিৎকার করতে লাগল। টহলদার ঘুম থেকে জেগেই জানতে চাইল, কি হয়েছে? অমনি কেয়ারটেকার ছেলেটি আঙুল দিয়ে ঘরের দিকে দেখিয়ে বলল, এই ঘরের একটি লোক পালিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে টহলদার দৌড়ালো বাইরে, এদিক-সেদিক খোঁজাখুঁজি করেও যখন খুঁজে পেল না তখন মনে মনে চিন্তা করল যে, লোকটা এত রাতে কোথাও যেতে পারবে না, নিশ্চয়ই কোথাও গা-ঢাকা দিয়েছে। ভোরের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নিশ্চয়ই ও ভোরের দিকে রওনা দিবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ।
টহলদার ভোরের অপেক্ষায় থাকল যখন ভোর হয়ে আসছে তখন সে রাস্তার তিন মাথায় এসে ঘাপটি মেরে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর শুনতে পেল, হ্যাঁ ঠিক কার যেন পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। একটু পরেই পাশের একটি রাস্তা দিয়ে কিছুটা দূরে কে যেন গা মুড়ি দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে। অমনি হাঁক দিল, অ্যাই, দাঁড়াও, দাঁড়াও বলছি। কিন্তু কোনো কথাই যেন সেলিমের কানে ঢুকছিল না। যতই টহলদার দাঁড়াতে বলে ততই সে দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে সেলিম পড়ে যায় মাটিতে উপুর হয়ে, মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। টহলদার দৌড়ে গিয়ে তাকে উঠিয়ে কাছাকাছি এক হাসপাতালে নিয়ে যায় । অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে হাসপাতালের বেডে। তার জ্ঞান ফেরানোর জন্য ডাক্তারেরা বহু চেষ্টা করা সত্বেও জ্ঞান ফেরেনি শুধু অজ্ঞান অবস্থায় তার মুখ দিয়ে অস্পষ্টভাবে একটি কথা বেরিয়ে আসছিল, বাড়ি যাবো।
সেলিম যাওয়ার পর সারারাত নরেন চিন্তায় ছিল, উৎকণ্ঠায় চোখ বন্ধ করতে পারেনি সে। কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হলো নরেন এই ভেবে যে এতক্ষণে সেলিম বোধ হয় বাড়ি পৌঁছে গেছে তার স্ত্রীর কাছে। মনে মনে ঈশ্বরকে ডেকে বলে, হে ঈশ্বর ওদের তুমি ভালো রেখো।

তাই ঈশ্বরের কাছে হাতজোড় করে প্রার্থণা করে, হে ঈশ্বর তুমি ওকে ওর নিজের বাড়িতে নিরাপদে পৌঁছে দিও। মনে মনে কল্পনা করে,মোসেদা তাকে দেখে খিলখিল করে হাসছে,আর সেলিম তাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, কত দিন দেখিনি তোমায়! মোসেদা লজ্জায় রাঙা হয়ে বলছে,ঘরে চলো মিঞা। ঘরে পা রাখতেই সেলিম বুক ভরে শ্বাস টেনে বলছে,
আহা, কি পরম শান্তি !
নিজের বাড়ি!

Nijer Bari (Own House) Short Story by Khushi Sarkar.

No comments:

Post a Comment