Katha Sahitye Premendra Mitrer Abadan - Khushi Sarkar
Name of Essay - Katha Sahitye Premendra Mitrer Abadan (Contribution of Premendra Mitra to Fiction)
Author - Khushi Sarkar,
Subject Topics - Premendra Mitra,
Category - Essay,
The essay on Premendra Mitra's contribution to fiction is written by poet Khushi Sarkar.
'কথা সাহিত্যে প্রেমেন্দ্র মিত্রের অবদান' প্রবন্ধ - খুশী সরকার
শিরোনাম - কথা সাহিত্যে প্রেমেন্দ্র মিত্রের অবদান,
কবি - খুশী সরকার,
বিষয় - প্রেমেন্দ্র মিত্র,
বিভাগ - প্রবন্ধ,
কথা সাহিত্যে প্রেমেন্দ্র মিত্রের অবদান প্রবন্ধটি লিখেছেন কবি খুশী সরকার
প্রবন্ধ - কথা সাহিত্যে প্রেমেন্দ্র মিত্রের অবদান
কল্লোল গোষ্ঠীর শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পকার কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে যেমন প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন তেমনি আধুনিক কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রেও ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রেমেন্দ্র মিত্র শ্রমজীবী মানুষের জীবন আচরণের কথা নিষ্ঠার সাথে তুলে ধরেছেন। যেহেতু তিনি ছিলেন কল্লোল গোষ্ঠীর লেখক তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁর যুক্তিবাদী মন প্রতিপদে জিজ্ঞাসা, আপন অধিকার প্রতিষ্ঠার অভীপ্সা, বিদ্রোহী মনের ভাবনাগুলিকে বাস্তব জীবনের মধ্যে খুঁজে বেরিয়েছেন। পেতে চেয়েছেন তার ঠিকানা এমনকি উত্তরণের পথ নির্দেশও দিয়েছেন।
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের জন্ম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ সেপ্টেম্বর কাশিতে। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র এবং মাতা সুহাসিনী দেবী। কবি শৈশবে মায়ের সঙ্গে চলে আসেন উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরে মামাদাদুর কাছে এবং কিছুদিন পর মামাদাদু মারা গেলে দিদিমা কুসুমকুমারী দেবীর সঙ্গে থাকেন মায়ের সঙ্গে নলহাটিতে। আবার সেখান থেকে কলকাতার ভবানীপুরে এসে দিদিমার তত্ত্বাবধানে শৈশব ও কৈশোরের কিছুদিন কাটান। পরে তিনি যখন সুবার্বন স্কুলের ছাত্র তখন মা কালাজ্বরে মারা যান। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও প্রতিভাবান বলে সুনাম থাকলেও ছিলেন চঞ্চলমতি। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে কলেজের প্রথম জীবনে আর্টস, পরে সায়েন্সে ভর্তি হন কিন্তু সাহিত্য ছিল তাঁর জীবনের প্রথম ব্রত তাই সব ছেড়ে-ছুড়ে সাহিত্য সাধনায় নিমগ্ন হন।
বাংলা কাব্যের জগতে প্রেমেন্দ্র মিত্র আবির্ভূত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের চেয়ে আলাদা মর্জি নিয়ে। তাঁর বৃহত্তর অনুভূতি একান্তই মানবককেন্দ্রিক। তিনি মানুষকে দেখেছেন তাঁর দীর্ঘ ইতিহাসের মধ্য দিয়ে ফলে তাঁর কবিতায় এসেছে অতীতের প্রসঙ্গ। কবি সৃষ্টিকে দেখতে চেয়েছেন সমগ্রভাবে। তাঁর কবিতাগুলি মূলত প্রকাশিত হয়েছে 'কল্লোল', 'কালি- কলম', 'বিজলী', প্রগতি প্রভৃতি পত্রিকায়। তার কাব্যগ্রন্থ গুলি হল - 'প্রথমা', 'সম্রাট', 'হরিণ চিতা চিল', 'ফেরারি ফৌজ', 'সাগর থেকে ফেরা,' 'কখনো মেঘ', 'অথবা কিন্নর', 'নদীর নিকটে' প্রভৃতি। তাঁর সব কাব্যেই ধ্বনিত হয়েছে একই সুর। কাব্যে তিনি নেমে এসেছেন আভিজাত্য মিনার ছেড়ে রাস্তায়।
প্রেমেন্দ্র মিত্র বাংলা কবিতার প্রকাশনীতিতে এনেছেন যুগান্তর। শুধু তাই নয় নগরজীবনের মানুষ হয়েও নাগরিক জীবনের নৈরাশ্য কবির 'সম্রাট' কাব্যের কবিতায় পাওয়া যায় শুধু তাই নয় 'ফেরারি ফৌজ' নামটিও প্রতীকী। এই কাব্যে তিনি কল্পনা করেছেন অশুভের সঙ্গে শুভের লড়াই অস্তিত্বের প্রথম সময় থেকেই। 'হরিণ চিতা চিল' কাব্যেও প্রতীকের মধ্য দিয়ে কবি আবেগকে চিহ্নিত করেছেন। আবার 'অথবা কিন্নর' কাব্যে কবি মুখ ফিরিয়েছেন অবচেতনার দিকে। বিষয় বৈচিত্র্য ও প্রকাশভঙ্গির অভিনবত্বে প্রেমেন্দ্র মিত্র যথার্থই আধুনিক কবি।
'প্রবাসী'র মাসিক পত্রিকায় ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে মার্চ ও এপ্রিল মাসের পরপর দুটি সংখ্যায় প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'শুধু কেরানি' ও 'গোপনচারিণী' গল্প দুটি দিয়ে তাঁর সাহিত্য জীবনের যাত্রা শুরু। পরে কল্লোল পত্রিকার জন্য 'সংক্রান্তি' নামক একটি গল্প লিখে পরিচিত হন 'কল্লোল' গোষ্ঠীর জনৈক লেখক রূপে।
পরবর্তীকালে 'কল্লোল', 'বিজলী', 'ভারতী,' 'সংহতি' প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর লেখালেখি চলতে থাকে এবং তারই মাঝে চক্রবেরিয়া মাইনর স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষকের চাকরি করতে থাকেন কিন্তু অস্থির মতি প্রেমেন্দ্র চাকরিতে স্থায়ী হতে পারেন নি। কখনো টালিখোলার সরকার, কখনো রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট, কখনো সাময়িক পত্রের সহ-সম্পাদক, কখনো বা ওসুধ তৈরি কোম্পানির প্রচারসচিব আবার এরই মাঝে প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর 'পাঁক', 'মিছিল', 'আগামীকাল' প্রভৃতি উপন্যাস এবং 'পঞ্চশর', 'বেনামী বন্দর' প্রভৃতি গল্পগ্রন্থ।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্প সংকলন গুলি হল 'বেনামী বন্দর','মহানগর', 'পুতুল ও প্রতিমা', 'মৃত্তিকা' ইত্যাদি। ছোটগল্পে তিনি কঠোর বাস্তবকে তুলে ধরেছেন - 'হয়তো', 'স্টোভ', 'শৃংখল' ইত্যাদি গল্পে আছে মধ্যবিত্ত মূল্যবোধের ভাঙ্গনের ছবি। নিম্নবিত্ত জীবনের ব্যর্থতার কাহিনী আছে তাঁর 'শুধু কেরানি' গল্পে এবং বেঁচে থাকার জন্য বিবেকহীন হওয়ার কথা আছে 'পুন্নাম' নামক গল্পে।
দারিদ্র্য যে নীতি ও আদর্শনিষ্ঠ মানুষকেও পথভ্রষ্ট করে তার পরিচয় আছে 'চুরি' নামক গল্পে। তাছাড়া 'সংসার সীমান্তে', 'মহানগর' গল্পে জীবন যে কত অসহায় এবং মানুষকে বাঁচার অভিপ্রায়ে যন্ত্রণার ও ক্ষত-বিক্ষত জীবন বেছে নিতে হয় - তার পরিচয় আছে। তবে প্রেমেন্দ্র মিত্রের খ্যাতি মূলতঃ মনস্তাত্ত্বিক গল্প রচনার মধ্যে। তাঁর স্টোভ, শৃংখল, ভূমিকম্প প্রভৃতি গল্পে মনবিকলন ও বর্তমান জীবন সংকট ধরা পড়েছে। এছাড়া রোমান্টিক ভাবনার যথার্থ পরিচয় আছে 'তেলেনাপোতা' আবিষ্কার গল্পে। এখানে তিনি গল্পকার হলেও তাঁর মধ্যে রয়েছে এক মায়াবী কবিসত্তা। আর এর জন্যই তাঁর অনেক গল্পেই কবিশক্তির তন্ময়তা, আবেগ, ব্যঞ্জনা ও প্রকৃতি প্রীতির সার্বিক পরিচয় পাওয়া যায়।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রথম উপন্যাস 'পাঁক'। এতে আছে নিম্নবিত্ত মুচিপাড়ার দৈনন্দিন দারিদ্র্যপূর্ণ জীবনের কথা তবে সেই সঙ্গে আছে সমাজতন্ত্রের পথে উত্তরণের প্রয়াস। 'মিছিল' উপন্যাসে অসহযোগ আন্দোলন, জেল এবং একইসঙ্গে আছে দেশসেবার নামে ভন্ডামি, মিথ্যাচার, ও সুবিধাবাদী ভাবনার প্রকাশ। এছাড়া অন্যান্য উপন্যাসের পটভূমিতে নতুনত্ব যেমন আছে তেমনি রোমান্স রসের প্রকাশও চমৎকার। তবে তাঁর উপন্যাসের বড় বিষয় হলো সমকালীন সমাজের অসংগতি, অর্থনৈতিক সংকট, মধ্যবিত্তের জীবনযন্ত্রণা ও বেকারত্বের যন্ত্রণা ইত্যাদি। আসলে প্রেমেন্দ্র মিত্র ছিলেন আদ্যপান্ত রোমান্টিক কবি ও লেখক। তাঁর উপন্যাস অপেক্ষা ছোটগল্প রচনাতেই সার্থকতা চোখে পড়ে বেশি।
প্রেমেন্দ্র মিত্র শুধু কবি, ছোটগল্পকার কিংবা ঔপন্যাসিকই নন, তিনি চলচ্চিত্রকারও বটে। 'খুনের জের' কাহিনীর চিত্রনাট্য রচনার যোগসূত্রে তিনি চলে আসেন চলচ্চিত্র জগতে। প্রায় কুড়ি বছর যুক্ত ছিলেন চলচ্চিত্রের সঙ্গে। অনেক ছবির কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান রচনা করেছেন। ১৪ টি ছবি পরিচালনাও করেছেন কবি। চলচ্চিত্রকার হিসেবে তিনি খ্যাতির অধিকারী।
প্রেমেন্দ্র মিত্র ছোটগল্পেই বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। যেহেতু তিনি দুই বিশ্বযুদ্ধ মধ্যবর্তীকালে আবির্ভূত হয়েছিলেন তাই নানা অভিজ্ঞতায় তিনি স্নাত আর এই কারণেই তাঁর গল্পে এসেছে সাম্যবাদের কথা। প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্পে নাগরিক মধ্যবিত্ত জীবনের অর্থনৈতিক সংকট ও মানসিক দ্বন্দ্বকে প্রস্ফুটিত করা হয়েছে তাই তাঁর গল্প আশা নৈরাশ্য, আনন্দ বেদনায় ভরপুর। তিনি যেহেতু কল্লোল গোষ্ঠীর লেখক তাই তাঁর গল্পের জগতে কল্পনার বিলাস ও আবেগপ্রবণতা একেবারেই বর্জিত। এর বদলে এসেছে চিত্রকল্প ও সাংকেতিকতা।
প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর গল্পে মনঃবিকলন ও যৌন জীবনকেও স্থান দিয়েছেন। শুধু নাগরিক জীবনের দুঃখ দারিদ্রতার গল্পে স্থান পায়নি, পতিতাদের করুণ জীবন কাহিনী নিয়েও গড়ে উঠেছে তাঁর গল্পের অবয়ব। গল্পের ব্যঞ্জনায় সাধারণ তুচ্ছ বিষয়ক অসাধারণ মূল্যবান হয়ে উঠেছে তবুও বলা যায় তাঁর গল্পে কঠোর বাস্তব মুখ্য হলেও তিনি ছিলেন আশাবাদী। তাই নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, "আধুনিক বাংলা ছোটগল্পে প্রেমেন্দ্র মিত্র একটি অসপত্ন আসনের অধিকারী।"
বাংলা সাহিত্যে বিশাল অবদানের জন্য প্রেমেন্দ্র মিত্র বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন শরৎ স্মৃতি পুরস্কার, সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার,পদ্মশ্রী জাতীয় সম্মান, সোভিয়েত ল্যাণ্ড নেহেরু পুরস্কার, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডিলিট ও বিশ্বভারতীর দেশীকোত্তম সম্মান।
এই বহুমুখী প্রতিভাধর কবি, ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার এবং চলচ্চিত্রকার প্রেমেন্দ্র মিত্র ক্যান্সার রোগভোগে ১৯৮৮ সালের ৩মে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। লেখায় ছিল যাঁর জীবনের ব্রত সেই তিনি লিখে গেছেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
কলমে ~ খুশী সরকার
রচনাকাল ~ তাং-০২-০৯-২০২৩
Valuable Contribution in Fiction of Premendra Mitra
No comments:
Post a Comment