Manabatar Apaman Short Story by Khushi Sarkar - Nabo Mukul

Latest

Bengali poem, Short story, essay and modern poems as education base

8 Oct 2023

Manabatar Apaman Short Story by Khushi Sarkar

Manabatar Apaman Bengali Short Story written by Khushi Sarkar

'মানবতার অপমান' গল্পটি লিখেছেন কবি খুশী সরকার,
গল্পের নাম - মানবতার অপমান,
কবি - খুশী সরকার,
বিভাগ - গল্প,

Manabatar Apaman by Khushi Sarkar

কবি খুশী সরকার 'মানবতার অপমান' গল্পটি লিখেছেন।

গল্প - 'মানবতার অপমান'

সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ চা খাচ্ছি। এমন সময় 'চোর', 'চোর', 'চোর' চিৎকার শুনে কান খাঁড়া করে ঠাহর করছি কোথায় গোলমাল, বুঝলাম নিচ থেকে উঠে আসছে। হুড়মুড় করে নিচে নেমে দেখলাম নেই,অমনি মোড়ে দাঁড়াতেই দেখি অনেক লোকের ভিড়। মাঝখান থেকে উঠে আসছে গোঙানির আওয়াজ। কেন যেন মারছে কাউকে। মার মার আর সেই জনতার ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসছে,"আমি চোর নই, আমি চোর নই "কাতরানি। ধক করে উঠলো বুকটা। "এত সকালে চুরি করতে এসেছিল" ভাবছি আর দেখছি কেউ কিছু বলছে না। নীরব দর্শক। ভিড় ঠেলে কোনোমতে ভেতরে ঢুকে দেখি,চুল উসকোখুসকো ছেঁড়া ময়লা শাড়ি পরা এক মহিলাকে বেধড়ক পেটাচ্ছে আর এক মহিলা। কোমরে শাড়ি গুঁজে লাথি ঘুসি সমানে মেরেই চলেছে, আর অন্যদিকে সাত-আট বছরের উলঙ্গ ছেলেটিকে বুকে চেপে আ: আ: করে অনুরোধ করছে, "আমাকে মেরো না, আমি চুরি করিনি।"

মনের ঝাল মিটিয়ে মারকুটো মহিলা এইবার জনতার দিকে চেয়ে চিৎকার করে বলছে, জানো তোমরা, জানো, এই মহিলা সকালবেলায় আমার বাড়িতে ঢুকে আমার অনেকদিনের জমানো একটা ভাঙ্গা কড়াই, ভাঙা স্টোভ আর কয়েকটা লোহার টুকরা সব চুরি করেছে। বলেই আবার উপুড় হয়ে পড়ে থাকা মহিলার পিঠে ডান পায়ে জোরে একটা লাথি মেরে দাঁত খিঁচিয়ে বলছে, চুরি করা তাও আবার এত সকালে!" মহিলার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। ওই অবস্থায় উঠতে গিয়েও পড়ে যেতে যেতে ছেলেটাকে দুই হাতে জাপটে ধরে পড়ে গেল মুখ থুবড়ে।

হঠাৎ ভিড় জমানো লোকদের মাঝখান থেকে একজন বলে উঠলো আচ্ছা তুমি এই মহিলাকে যে এত মারছো ওর ব্যাগ সার্চ করে দেখেছো তোমার জিনিসপত্র আছে কিনা? দেখিনি, তবে ওর টোপলাতে ঠিক পাওয়া যাবে।ওকে আমার বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছি নিজের চোখে। তারপরে আর একজন বলে উঠলো,অ্যা,সৈকত,দেখ তো ওই মহিলার পুটুলিটা সার্চ করে। অমনি সৈকত পুটুলি খুলে দেখে,কয়েকটা প্লাস্টিক, কয়েকটা মুখছাড়া খোলা বোতল আর একটা দুমড়ানো মুছড়ানো ছাতা। সৈকত দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেই মারকুটো মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল, "কই তোমার জিনিস পেলাম না তো? তুমি যে বললে তোমার কড়াই লোহা সব চুরি করেছে?" পাশ থেকে আর একজন বলে উঠলো, "আরে ভালো করে দেখ না চুরি না করলে কি আর এভাবে কাউকে কেউ মারে? নিশ্চয়ই চুরি করেছে।" ইতিমধ্যে সেই চোর মহিলা কোলের ছেলেটিকে জাপটে ধরে উঠে বসেছে কোনোমতে। নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, ছেলেটি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।

মহিলা ছেলেকে দুই হাতে আগলে করজোরে বলছে, "বাবুগো আমি ওনার কিচ্ছু চুরি করিনি। ওই জঙ্গলের ভেতরের রাস্তাটা উনার বাড়ির পাশ দিয়ে। ওইদিক দিয়ে আসছিলাম আর অমনি উনি আমাকে দেখে তেড়ে আসলো আর চুলের মুঠি ধরে আমাকে টানতে টানতে এখানে এনে ফেলে দিয়ে মারতে শুরু করল। আমি ওনার কিছু চুরি করিনি বাবু।"

পাশের এক ভদ্রলোক মারকুটো মহিলার দিকে তাকিয়ে নম্রসরে বলল, "আচ্ছা, তুমি যেখানে তোমার জিনিস রেখেছিলে, সেখানে দেখেছো ভালো করে? ভদ্রলোকের কথা শুনে মারকুটো মহিলা অগ্নিশর্মা হয়ে বলে, আপনি কী বলতে চাইছেন? আমি মিথ্যা বলছি?
আরে না না, আমি বলতে চাচ্ছি যে আপনার জিনিস অন্য কোথাও রাখেননি তো?

"না না, আমি ওখানেই রেখেছিলাম।"
"তাহলে জিনিসগুলো কোথায় গেল? উনার কাছে তো নেই।"
"নিশ্চয়ই কোথাও লুকিয়ে রেখেছে।"
"উনি লুকানোর সময় পেল কোথায়? আপনি তো তখনই ধরে আনলেন।"
"নিশ্চয়ই লুকিয়েছে।আরো মারলে ঠিক মুখ খুলবে।"
আরো মারতে হবে? আপনি তো ডেনজারাস মহিলা।"
"আমার জিনিস চুরি করেছে, আমি মারবোই।"

মারতে উদ্যত হলে ভদ্রলোক বলল,আরে দাঁড়ান, দাঁড়ান। বিমলের দিকে তাকিয়ে বললেন,যা তো বিমল ওই মহিলার সঙ্গে,উনি কোথায় রেখেছিলেন?
আর হ্যাঁ, আশপাশটাও দেখবে।"

"মারকুটো মহিলা আয় আয় বলে তীব্র গতিতে বাড়িতে গিয়ে একটা ফাঁকা জায়গা দেখিয়ে বলে,এই যে এখানেই আমার জিনিস ছিল।"
বিমলের সঙ্গে আর‌ও দু/একজন গিয়ে দেখে সত্যিই ওখানে নেই।"
"সেই ছেলেগুলোর একজন বলল আপনার ঠিক মনে আছে?
"হ্যাঁ এখানেই রেখেছিলাম।" না।

তখন এদিক সেদিক দেখতে গিয়ে ছেলেগুলোর হঠাৎ নজরে আসে বাথরুমের পাশে রাখা আছে উনার জিনিস। সঙ্গে সঙ্গে তারা সেই মারকুটো মহিলাকে ডেকে বলে, এই জিনিসগুলো আপনার তো?
"হ্যাঁ তাইতো এখানেই তো রেখেছি।"বলেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মহিলা। ছেলেগুলো ভদ্রলোককে এসে সব খুলে বলে।

সব শুনে ভদ্রলোক বললেন, এ ঘোর অন্যায়। অসহায় গরীব মানুষকে এভাবে নির্যাতন করা মানে মানবতার অপমান। অন্যায় করলেও এইভাবে অসহায় মানুষকে অপমানিত করা বা লাঞ্চিত করা কোনো মানুষেরই উচিত নয়। ভদ্রলোক ব্যথিত কন্ঠে সৈকতকে উদ্দেশ্য করে বলে যা তো তোরা, এই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দে। উনার এখনি চিকিৎসার দরকার। সৈকত সহ অন্যান্য কয়েকজন ছেলে সেই মহিলাকে কোনমতে একটি ভ্যানে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

"মানুষ এখন অমানুষ হয়ে গেছে। মানবতার চিহ্নটুকু নেই। মানবতার অপমানে কারো কিছুই যায় আসে না। শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত।"

ভদ্রলোক আপন মনে বলতে বলতে বাড়ির দিকে রওনা হয়।

Manabatar Apaman (The story Humiliation of Humanity) Bengali Short Story is written by poet Khushi Sarkar

No comments:

Post a Comment