Adhunika Short Story by khushi Sarkar
Short Story - Adhunika,
Athour - khushi Sarkar,
The short story Adhunika has written by athour khushi Sarkar.
ছোটগল্প : আধুনিকা - খুশী সরকার
(Short Story : Adhunika - khushi Sarkar)
সৌগত টেবিল থেকে প্রজেক্টর ফাইলটা নিতে গিয়ে হঠাৎ দেখল তার টেবিলে কয়েকটি ছবি একটি মেয়ের ছবি পরপর সাজানো। না নিয়ে ছবিগুলো হাতে নিয়ে ভাবছে,একি, এতসব মেয়ের ছবি এখানে রাখল কে? আর্কিমিডির মানসিকতার সব ছবি কেউ গা ঢেকে আঁচল দিয়ে দুচোখে কাজল দিয়ে কেউবা ঠোঁটে হাসি নিয়ে। কি সব উল্টাপাল্টা ছবি দেখছি ভাবতে ভাবতেই প্রজেক্ট এর ফাইল নিয়ে দরজার দিকে এগোতে মা রান্নাঘর থেকে আঁচল দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলে বাবা অফিস যাচ্ছিস? বড্ড লেট হয়ে গেছে। মিটিং আছে অফিসে আসিমা বলে বেরিয়ে গেল। মধুজা মনে মনে ভাবছে ছবিগুলো ঠিক ছেলের নজরে এসেছে। যাক বাবা, ছবিগুলো নিশ্চয় দেখেছে। আর সীমাকে ওর পছন্দ হবেই। ছোটবেলায় ওরা পড়াশোনা করেছে একসঙ্গে খেলাধুলাও করত প্রায় একসঙ্গেই যদি সীমাকে একবার পছন্দ হয়ে যায় তাহলে আর দেরি করবো না, সমুর এবার বিয়েটা দিয়েই ছাড়বো।
"কি ব্যাপার একা একা হাসছো যে?" ভাস্কর বাবুর কোথায় বর্তমানে ফিরে আসে মালা। আরে কোমর বিষয়ে ভাবছিলাম গো। আরে তোমার ছেলে তোমারই মত না? কিছুতেই বিয়ে করবে না পণ করে বসে আছে। তাই ভাবলাম সোজা হলে যখন ঘি উঠছে না তখন আঙুলটা একটু বাঁকা করা দরকার। সেদিন ঘটক মশাই যে কয়েকটা মেয়ের ছবি দিয়ে গেল না-- তার মধ্যে ওই পাড়ার ওই যে সীমা গো, ওরও একটা ছবি ওর মধ্যে আছে। "
তুমি চেনো তো মেয়েটাকে। চেনো না?"
"কোন্ মেয়েটা বলতো?
আরে ওই যে ছোটোবেলায় সমু আর ওই মেয়েটা একসঙ্গে স্কুলে যেত। ওর মা প্রায় ওকে নিয়ে এসে বলত না - "দাদা আমার মেয়েটাকেও আপনার ছেলের সঙ্গে নিয়ে যান না? ওর বাবা তো চলে গেছে অফিসে খুব তাড়াতাড়ি।"
"আচ্ছা এবার বুঝলাম। দেবুর মেয়ের কথা বলছো?
"কোন্ দেবু বলতো?" ভ্রু কুঁচকেচ উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকে মালা।
"আরে দেবু মানে দেবব্রত বিশ্বাস।" ওই যে ডি এম অফিসে চাকরি করে। সেবার একসঙ্গে পুরী ঘুরতে গেলাম না---"
কিছুক্ষণ মগজ হাতড়ে হঠাৎ একবার সামনে পিছনে মাথা দুলিয়ে বলে ওঠে, ওর মেয়ের কথাই বলছি।
"তা তো অনেকদিন আগে দেখেছি, এখন কেমন হয়েছে ঠিক বলতে পারবো না।"
আরে ভীষণ সুন্দর হয়েছে গো। কি সুন্দর দুধে আলতা গায়ের রঙ, টিকালো নাক, পটল চেরা চোখ আর মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো কোঁকড়ানো বেশ লম্বা চুল।
"তুমি আবার কোথায় দেখলে?" ভাস্কর বাবুর উত্তরে মালা জানাই। আরে সেদিনই দেখলাম মা মেয়ে দুটোতে এক্সপো মেলায় যাচ্ছে। আমিও যাচ্ছিলাম একটু শাড়ির দোকানে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল তাই এটা সেটা গল্প করার পর বলে, দিদি একটা কথা বলবো, মনে কিছু করবেন না তো?"
"আমি তো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম বলুন না কি কথা বলবেন?"
একটা ভালো পাত্রের খবর দিতে পারবেন? দেখুন না মেয়েটা এম. এস. সি. পাশ করে এখন ইগুনু থেকে বি.এড. নিচ্ছে। তারপরে চাকরি-বাকরি। আর বুঝতেই তো পারছেন এখন যে চাকরির অবস্থা। এইতো এস.এস. সি.কবে থেকে বন্ধ হয়ে আছে। আবার কবে শুরু হবে কে জানে? অতদিন কি আর মেয়েকে বসিয়ে রাখা যায় বলুন? তাই ভাবছি এই দুমাস পরে বি.এড এর ফাইনালটা হয়ে গেলেই মেয়েটার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দেখেন, চলতে ফিরতে রাস্তাঘাটে তো কত ছেলেই না দেখা যায় কিন্তু আপনি যখনই বিয়ের জন্য পাত্রের খোঁজ করবেন তখন আর চোখে পড়বে না কাউকে। তাই ভাবছি আপনাদের তো অনেক জানাশোনা যদি কোনো খোঁজ থাকে আপনার হাতে, দয়া করে একটু বলবেন দিদি।" বলেই ওরা চলে গেল।
আমি বাড়ি ফেরার সময় মনে মনে ভাবলাম,
"যদি আমার সমুর সঙ্গে ওর বিয়ে দেয়া যায়।
ভালো হবে না বলো" মালা ভাস্করের মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করে। একটু চিন্তান্বিত হয়ে মাথা নীচু করে ভাস্কর বলে, "ভালো তো হবে বটে কিন্তু------"
"আরে কিন্তু কিন্তু করছ কেন?"
"তুমি বুঝতে পারছ না গিন্নি, সমস্যা কোথায়?
"একটু খোলসা করে বলবে,কোথায় সমস্যা? ঝাঁঝিয়ে ওঠে মালা।
"সমস্যা তোমার ছেলে।"
"আমার ছেলে!" চোখ কপালে তুলে মালা তাকিয়ে থাকে।
আরে অনেক ব্যাপার আছে। চলো চলো বাড়ির ভেতরে চলো। এখানে দাঁড়িয়ে কি আর এত কথা বলা যায়? বরং আমাকে এক কাপ চা দাও। অনেকটা হেঁটে এলাম তো। দু'জনে চা খেতে খেতে না হয় ---
"ও হ্যাঁ ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুমি ড্রয়িং রুমে বসো। আমি চা করে আসছি।"
ভাস্করের হাতে চা দিয়েই মালা বলে,এবার বলো, তোমার সমস্যা কোথায়?'
"তুমি বুঝতে পারছো না আজকালকার ছেলে, তোমার পছন্দ করার মেয়ের সঙ্গে বিয়েতে বসবে কি?
তারও তো একটা পছন্দ আছে নাকি? আগে সেটাই জানানোর দরকার।"
আমার সমু ওরকম ছেলেই না। এতদিনে ছেলেটাকে তুমি এই চিনলে দেখো কালকেই তার প্রমাণ পাবে তোমার সামনেই জিজ্ঞেস করবো, ওর কোন্
মেয়েকে পছন্দ হয়েছে?
"ঠিক আছে আগে তা-ই জিজ্ঞেস করো।"
ভাস্করবাবু, উঠে যায় স্নান করতে। যথারীতি স্নান খাওয়া করে কিছুটা রেস্ট নিয়ে আবার বিকেলে বেরিয়ে পড়ে হাঁটার জন্য।মালাও কিছুটা বিশ্রাম নেয়।
আসন্ন সন্ধ্যায় মালা উঠে পড়ে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য। তুলসী বেদীতে প্রদীপ জ্বালতেই দেখে সৌগত বাড়ি ফিরল। ঘরে গিয়ে অফিসের পোশাক ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে।
"এখন চা খাবি তো বাবা" মালা জিজ্ঞেস করতেই সমু বলে,"হ্যাঁ মা দাও"
হাতে চা ধরিয়ে ইত করি জিজ্ঞেস করে, বাবা আজ সকালে তোর টেবিলে কতগুলো মেয়ের ছবি দিয়ে এসেছিলাম। ওগুলো তোর বিয়ের জন্য পাত্রীদের ছবি। দেখেছিস?
"তাই বলো, ওগুলো তুমি রেখেছিলে!অত ভালো করে দেখতে পারিনি। খুব তাড়া ছিল তো। তবে মনে হল বেশ ভালোই সঙ সেজেছে সব বিয়ের জন্য।"
কি যে বলিস বাবা, কত নম্র ভদ্র চাহনি। পোশাক- আশাকে কত শালীনতা?
এখন নিয়ে আসবো দেখবি?
না না মা,এখন ঐসব দেখে কাজ নেই।
কেন তোর শালীনতাসম্পন্ন পোশাক-আশাক পছন্দ নয়?
পছন্দ অপছন্দের প্রশ্ন নয় আসলে মানসিকতার এখন মেয়েরা আধুনিক মানসিকতা সম্পন্ন ওরা এইরকম মাথায় ঘোমটা দিয়ে শাড়ি পরে গৃহ কাজে নিপুনা হলেও বাইরের কাজে পারবে না। কারণ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে ছোটখাটো পোশাক চায়। অনেক মেয়ে এখন বাইরের জগতে পা রেখেছে মা। বিভিন্ন কোম্পানি স্কুল কলেজ সব জায়গাতে তারা কাজকর্ম করছে। তাই দ্রুত গতিতে কাজ করতে গেলে শাড়ি পরে হয় না।"
"সে ঠিক আছে বাবা, অসুবিধা নেই।
তবুও -- একবার দেখবি নাকি?"
"তুমি কি গো? বললাম না, আগে নিজেকে গুছিয়ে নিই, বাড়িটা দেখছো না কেমন হয়ে আছে, একটু টাকা পয়সা আসুক, ঠিক ঠাক করি। তারপরে ওসব বিয়ে-টিয়ে ভাবা যাবে।
"আগে মেয়ে পছন্দ তো কর্, তারপর না হয়-----"
"ওসব নিয়ে তুমি ভেবো না মা। মেয়ে ঠিক জোগাড় হয়ে যাবে।"
"আমি না ভাববো না তো কে ভাববে,বল? আমারও তো শখ করে একটা সুন্দর বউ আসবে বাড়িতে, এ-ঘর, ও-ঘর ঝুমুর ঝুমুর নুপুর পায়ে ঘুরে বেড়াবে, তোর অফিসের রান্নাবাড়ি করে দিবে, তোর যত্ন করবে, মা হয়ে আমার কি এটুকু আশাও থাকতে নেই ?"
তা তো আছে বুঝলাম কিন্তু আজকালকার মেয়েরা কি তোমার মতো হবে?"
"না হোক তবু আমি তোর বিয়েটা দিতে চাই বাবা, না করিস না।"
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অগত্যা উঠে যায় মালা। মনে মনে ভাবে, "এই ছেলে কি করবে কে জানে।!"
হাঁটুব্যথা কোমরব্যথা নিয়েই মালা কোনোমতে বাপ বেটার রান্নাটুকু করে। মালতি রোজ এসে ঘর দুয়ার মুছে, বাসুন-টাসুন মেজে দিয়ে যায়। সপ্তাহে একদিন কাপড় চোপড়ও কেচে দেয় কিন্তু মালতি চলে গেলে বাড়িটা একদম ফাঁকা হয়ে যায়। ভালো লাগেনা মালার এভাবে একাকী থাকতে।ভাস্করও চলে যায় দুই বেলা হাঁটতে। মাঝে দুপুরটুকু বাড়িতে থাকলেও বেশিরভাগ সময় শুয়েই থাকে।
কিন্তু কি আর করা ছেলে তো বিয়েতে কিছুতেই রাজি হয় না। অগত্যা ঠেলে ঠেলে চলছিল সংসার হঠাৎ একদিন অফিস থেকে সৌগত যখন বাড়ি ফিরল, তার সঙ্গে একটি মেয়ে দেখতে ভারী সুন্দর কিন্তু পরনের জিন্সের প্যান্টটা সামনে পিছনে অনেক জায়গায় কাটা কাটা।কেমন যেন ছেঁড়া ছেঁড়া। প্যান্টের উপরে ছোট্ট একটা টপ তাও বুকের উপরটা অনেকটাই ফাঁকা । গটগট করে হাই হিল জুতো পরেই সমুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে ঘরে ঢুকে গেল। মালা তখন বাইরে বসে চা খাচ্ছিল তাই হঠাৎ নজরটা যেতেই কেমন যেন অবাক হলো। অথচ সমু কিংবা মেয়েটা মালার দিকে তাকালো না পর্যন্ত।
নিশ্চয়ই ছেলের বান্ধবী কিংবা অফিসের কলিগ মনে করে মালা চা-বিস্কিট দিতেই সমু মালাকে দেখিয়ে মেয়েটিকে বলে, "টিনা, আমার মা"
টিনা ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে,মালার হাতটা ধরতে নিজের হাতটা বাড়িয়ে বলে,"হায়।"
No comments:
Post a Comment
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.