Atmabishwaser Jay Bengali Story by Khushi Sarkar - Nabo Mukul

Latest

Bengali poem, Short story, essay and modern poems as education base

16 May 2022

Atmabishwaser Jay Bengali Story by Khushi Sarkar

The Victory of Self-confidence Story by Poet Khushi Sarkar

আত্মবিশ্বাসের জয় গল্পটি লিখেছেন কবি খুশী সরকার - Atmabishwaser Jay Bengali Story by Khushi Sarkar

আত্মবিশ্বাসের জয়

ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরিয়েই তিথির চক্ষু চড়কগাছ। "ওরে বাপরে' কি মেঘ করেছে! এক্ষুণি প্রবল বেগে বৃষ্টি নামবে। চলো, চলো,তাড়াতাড়ি। তরুণের দিকে তাকিয়ে আতঙ্কিত তিথি এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে। পাঁচ সাত মিনিট পর যখন ওরা বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছায় তখন বাসস্ট্যান্ড প্রায় খালি। দু-একটা মিনিবাস শুধু দাঁড়িয়ে আছে চাতক চেয়ে।

"বাস ছাড়ছে, বাস ছাড়ছে, হরিরামপুর, বুনিয়াদপুর,ফতেপুর যারা যাবেন তারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আর বাস পাবেন না, এই আমাদের লাস্ট টিপ। চলে আসুন, তাড়াতাড়ি চলে আসুন" - কথাগুলো ঊর্ধ্বশ্বাসে গাড়ির কন্ডাক্টর ক্রমাগত হাঁক দিয়ে যাচ্ছে। তিথির কানে পৌঁছাতেই গাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটতে থাকে। তারা কোনোমতে বাসে উঠেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। তরুণ দেখে গাড়িতে প্রচন্ড লোকের ভিড়, একটিও সীট নেই তবু মনে মনে তরুণ ভাবে, "উঠে পড়েছি তো, প্রায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছে যাবো"।

বাড়ির বাইরের দরজায় দাঁড়াতেই দেখে দরজা হাট করে খোলা। ভেতরে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। "আবার কোনো অশান্তি নাকি!" একটা অজানা আশঙ্কা উঁকি দেয় তিথির মাথায়। ভেতরে গিয়েও কাউকে দেখতে না পেয়ে তরুন ডাক দেয়,
"মা, ওমা
কোথায় তুমি?"
কারো কোনো উত্তর নেই।
মায়ের ঘরের আরো কাছে গিয়ে আবার ডাক দেয়,কোথায় তুমি মা?
উত্তর দিচ্ছ না কেন?
বেশ কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে আওয়াজ আসে," শুয়ে আছি"।
"আমরা এসেছি তো। বাইরে এসো"
"আমার শরীর খারাপ। তোরা যা এখন। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না"
"ঠিক আছে" বলেই তরুণ ঘরে যাবার জন্য উদ্যত হলে হঠাৎ নজরে আসে ঘরে তালা দেওয়া। সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরে বলে," ঘরে তালা কেন মা, আমরা ঢুকবো না?"

"এখানে থাকবে না বলে অন্যত্র জায়গা কিনলে, তো সেখানেই যাও। আমার বাড়ি, আমার ঘর,তালা দেওয়াই থাক" রাগান্বিত স্বরে বলে সুমতি। কথাগুলো শুনে হতবাক তরুণ। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু তিথির আত্মসম্মানে লাগে। মনে মনে ভাবে,আর নয়, অনেক সয়েছি। প্রচণ্ড জেদে বেরিয়ে আসে সে রাস্তায়, ভিজতে থাকে। অমনি পাশের বাড়ির কাকিমা দরজা খুলে বেরিয়ে এসে বলে,"একি বৌমা, তুমি ভিজছো কেন? এসো এসো আমাদের ঘরে এসো"বলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় নিজের ঘরে।

একটু পরে তরুণও আসে সেখানে সে রাত্রি তারা কাকিমার যত্নে থাকে তার বাড়ীতে। কাকিমার হাত চেপে ধরে তিথি বলে, "কাকিমা দেখবেন, আমি ঠিক পারবো একদিন এই দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে। আমার নিজের উপর আস্থা আছে।"
"তুমি পারবে, ঠিক পারবে। তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে বৌমা" বলে কাকিমা সজল চোখ ঘুরিয়ে নেয় অন্যদিকে।
পরদিন ভোর হতে না হতেই বেরিয়ে পড়ে ওরা হরিরামপুরের উদ্দেশ্যে। সেখানে একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নেয় স্বল্পদামে।
বহুদিনের পরিচিত এক বন্ধুর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে তারা শুরু করে তাদের জীবনের নতুন লড়াই। কিন্তু হঠাৎ করে টিউশনি যোগাড় করা সম্ভব নয়, ভেবে আতঙ্কিত হয় তিথি।মনে মনে তার আরাধ্য দেবতাকে ডাকে, "হে দীনের দয়াল পরম করুণাময়, এ বিপদ থেকে উদ্ধার করো।"

সেদিন যেন পরম করুণাময় ঈশ্বর তার ডাক শুনেছিলেন নিজ কানে। দু-একদিনের মধ্যেই জোগাড় হল টিউশনি। দেখতে দেখতে এত বেশি ছাত্র-ছাত্রী যোগাড় হলো যে ওই ছোট্ট ঘরে জায়গা দেওয়া তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লো। অন্যদিকে তরুন‌ও একটা টিউশনি করে। কোনোমতে ডাল বড়া আলু সিদ্ধ ইত্যাদি খেয়ে দিন কাটে তাদের কিন্তু তিথির গভীর আত্মবিশ্বাস যে, এইভাবে তাদের বেশিদিন চলতে হবে না। নিশ্চয় ঈশ্বর কোনো একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। এই আত্মবিশ্বাসেই চলতে থাকে তাদের জীবনের লড়াই। প্রায় দশ মাস পর হঠাৎ একটি উইলিং লেটার নিয়ে তিথির বাবা একদিন উপস্থিত সেখানে। ত
িথি মনে মনে ঈশ্বরকে স্মরণ করে বলে, যে কাজ‌ই হোক না কেন, যেন একটা ব্যবস্থা হয়। সেই জানে কষ্টের মূল্য ব্যর্থ হয় না, একদিন না একদিন পায়-ই। মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে তার বয়ে যাওয়া দিন। একটা অজ গ্রাম, যেখানে বিদ্যুৎ নেই, শিক্ষা নেই, আছে শুধু গরীব মানুষের প্রাণান্ত পরিশ্রম, কাদা মাটি জলে ভেজা শরীর। অশিক্ষা কুসংস্কারের অক্টোপাশে জড়িয়ে থাকা সেই গ্রামেই তার জন্ম। যে সমাজে সন্তানের জন্ম দিতে দিতেই শিশুকন্যা একদিন বুড়িয়ে যায়, যৌবন ঝরে যায় ফুল ফোটার আগেই। সেই সমাজে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন নিছক পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।

তিথিরও জীবন শুরু হয়েছিল সেই গ্রামের‌ই আর পাঁচটা মেয়ের মতই কিন্তু রাতের আকাশে চাঁদের জ্যোৎস্নায় নিজেকে ফোটানোর দেখেছিল স্বপ্ন সে। সেই স্বপ্ন পূরণে পড়াশোনা করছিল নানা গালমন্দ ভর্ৎসনা শুনেও। তার পড়াশোনাকে সহজভাবে মেনে নেয়নি পাড়া-প্রতিবেশী ও গুরুজনেরাও। ত্রয়োদশী বা অষ্টাদশী হিসেবে বিয়ে না হ‌ওয়ায় নানা কুৎসা শুনেছে সে অনেক কিন্তু এই সব কুৎসা বা ভর্ৎসনা তিথিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি বরং তাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে আরো বেশি করে।

"তুমি কি উইলিং লেটারটা নিয়ে দাঁড়িয়েই থাকবে" তরুণের কথায় বর্তমানে ফিরে আসে তিথি। আনন্দ আবেগে সেই রাতে নির্ঘুম চোখে মনে মনে কল্পনার জাল বুনে চলে তিথি। জ্ঞানচক্ষুতে দেখতে পায়, তার জীবনে সাফল্য এসেছে। যা-কিছু অপূর্ণতা সব পূর্ণতা পেয়ে বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছে সে।
তরুণ পাশ থেকে বুঝতে পারে, তিথির চোখে ঘুম নেই।
"ঘুমাওনি এখনও" জিজ্ঞেস করে তরুণ।
"না গো ঘুম আসছে না"
"তা বললে কি হয়! শরীরটাকে সুস্থ রাখতে হবে তো।"
"শরীর" দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তিথি। মন সুস্থ না থাকলে কি শরীর সুস্থ থাকে, বলো? তিথির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তরুণ বলে, "চিন্তা করো না। যদি টাকা লাগে তবে ঠিক ম্যানেজ হয়ে যাবে, সে যেভাবেই হোক।

অবশেষে মাস দুয়েক পরে ইন্টারভিউয়ের কল লেটার পায় তিথি। শুরু হয় আর এক লড়াই। দু'জন মিলে টাকা জোগাড়ের আরেক লড়াই। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্বাস পেয়ে অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে টাকা সংগ্রহে নেমে পড়ে। ইন্টারভিউয়ের দিন ইন্টারভিউ দেয় ভালো কিন্তু সম্পূর্ণ অচেনা পথে হাঁটতে গিয়ে পায়ে রক্তক্ষরণ‌ও হয় ঢের বেশি।
কোন বাধা বা কষ্ট তিথির কাছে খুব একটা মূল্য রাখতে পারে না। অবশেষে হয় সে পেনালাইজড। ঈদের চাঁদ দেখার মত তার সারা দেহ মন জুড়ে আনন্দের জোয়ার। কিন্তু ঈশান কোণে কখন মেঘ জমেছে সে লক্ষ্য করতে পারেনি হঠাৎ ঘনিয়ে আসে জমাট বাঁধা অন্ধকার তার সামনে।
শিক্ষিকার পদে যোগদান করতে গিয়ে শোনে, আজ তার কাজে যোগ দেওয়া হবে না। প্যানেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। আগে ইন্সপ্যাক্সন হবে তারপর তার পক্ষে ভালো রিপোর্ট এলে তবেই চাকরি হবে, নচেৎ না‌ও হতে পারে।মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে তিথি। হতাশায় ভাবে, তাহলে কি এতদিনের স্বপ্ন আশা আত্মবিশ্বাস-- সবকিছুতেই ভরাডুবি হবে তার। মানসিক ঝড়ে মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসের খুঁটিটা যেন নড়ে উঠলো তার।

"যতই ঝড় আসুক, যতই বাধা আসুক, তোমার কিচ্ছু হবে না, দেখো"। সান্তনা দেয় তরুণ কিন্তু সান্ত্বনায় পাথর গলে না। আবার দীর্ঘ প্রতীক্ষা----
অবশেষে প্রতীক্ষার প্রহর গোনা শেষ হয় প্রায় দেড় মাস পরে। স্কুলে যোগদান করার দিন ধার্য হয় আবার নতুন করে। তিথির জীবনে আসে আত্মবিশ্বাসের শুভ তিথি।
নির্দিষ্ট দিনে সে যোগদান করে স্কুলে নতুন শিক্ষিকা রূপে। ভোরের রক্তিম সূর্য যেন আদরে ছুঁয়ে যায় তার হৃদয়। আত্মবিশ্বাসের জয়ে ঘাসে ঘাসে শিশিরবিন্দু মুক্তো হয়ে জ্বলে ওঠে। এক গভীর প্রশান্তি নেমে আসে তিথি তরুণের জীবনে। নতুন ছন্দে শুরু হয় আবার পথ চলা।

তাং ১৫-০৫-২০২২

No comments:

Post a Comment

Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.