The essay of Khushi Sarkar for the position of women in Indian family and society
Points of the Essay:
What is the position of women in Indian family and society? It is very important to know it now. In the wake of the human civilization, after the Godharma-based society, for the sake of their security and stability, there is the unity of the family about the multiplicity of women.
It is not right that the woman was neglected and exploited for the time being. When we look at the ancient history, we can see that in the ancient Vedic period, women enjoyed considerable independence in the patriarchal family system. Not only did participation in marriage, Yajna's ceremony and culture, but also education. At that time, Apala, Vishwabara, Lopamudra, and educated women were identified. In the subsequent Vedic literature, the role of women in the progress of education and culture was enough. Gregi and Maitreyee mentions educated and noble women.
Read the essay in details given below this page.
প্রবন্ধ : পরিবার ও সমাজে নারীর স্থান
প্রাবন্ধিকঃ- খুশী সরকার
সম্ভবত যীশুর জন্মের সাড়ে চার হাজার বছর আগে ইউরেশিয়া থেকে একদল যাযাবর উপজাতি ইন্দো ইউরোপিয়ান অঞ্চলে অভিযান চালানোর পরে সেই সময় থেকে শুরু হয় প্রকৃতি ও নারীর উপর পুরুষের আধিপত্যের সূত্রপাত। অনেকের মতে সপ্তদশ শতাব্দীর শিল্প বিপ্লবে ইউরোপে সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক পরিবর্তন আসে, তার ফলে বিচ্ছিন্ন হয় প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক এবং দেখা দেয় যুক্তিবাদী যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। বিশেষত: বাণিজ্য ও শিল্পায়নে নারীর উপর সমাজের আধিপত্য আরো দৃঢ় হয় ।মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে গোধর্মভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার পরবর্তীকালে নিজেদের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের তাগিদে নারীর বহুগামিতা থেকে একগামিতা-ই পরিবারের সূচনা।প্রাবন্ধিকঃ- খুশী সরকার
নারী আবহমানকাল ধরে যে অবহেলিত ও শোষিত ছিল, ঠিক তা নয়। আমরা প্রাচীন ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাবো প্রাচীন বৈদিক যুগে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থায় নারী যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করত। বিবাহ, যজ্ঞানুষ্ঠান এবং সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণই শুধু নয়, শিক্ষাও গ্রহণ করেছিল। সেসময় অপালা,বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা প্রমুখ শিক্ষিত ও মহিয়সী নারীর পরিচয় পাওয়া যায়। পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যেও শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রগতিতে নারীর ভূমিকা ছিল যথেষ্ট। গার্গী মৈত্রেয়ী প্রমুখ শিক্ষিত ও মহিয়সী নারীর উল্লেখ আছে। এই সময় নারী ও পুরুষ ছিল একে অপরের পরিপূরক। পুরুষের যোগ্য সঙ্গিনী হয়ে ওঠা অর্থাৎ নারী হয়ে ওঠে একে অপরের পরিপূরক ছিল। আধুনিক যুগের প্রথম দিকেও নারী হয়ে ওঠার ইঙ্গিত আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'অরূপ রতন' নাটকে এবং শরৎচন্দ্রের 'শ্রীকান্ত' উপন্যাসে। তবে উল্লেখ্য, সেসময় মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিক্ষিতা ও মহিয়সী নারীর পরিচয় পাওয়া গেলেও তখনো সমাজে অনেকাংশেই নারী ছিল উপেক্ষিত ও অশিক্ষিত।
আদিম যুগ থেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংঘটিত হয়েছে অনেক বিপ্লব ও আন্দোলন। প্রাচীনকালে নারীকে কোথাও কোথাও 'জননী', কোথাও 'সহধর্মিনী' বা 'শক্তিরূপা' উল্লেখ করলেও নারী সম্পর্কে পুরুষের মানসিকতার তেমন পরিবর্তন হয়নি। বিশেষত পুরুষের সঙ্গে নারীর শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে পার্থক্যটা নারীর প্রতি পৃথক দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও প্রকট করে তুলেছে। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিই তাহলে লক্ষ্য করবো পুরুষ সবসময়ই নারীর ভাগ্য নিজেদের হাতে ধরে রেখেছে এবং তারাই ঠিক করেছে নারীর কি হওয়া উচিত আর কি নয়। আসলে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হোক আর বুর্জোয়া ব্যবস্থায় হোক, সেই পুরুষদের হাতেই ছিল কর্তৃত্ব। অনেকে নারীর স্বাধীনতার কথা, সাম্যের কথা বলেছেন কিন্তু মানসিক দিক থেকে নারীর স্বাধীনতা কতখানি বিশ্বাস করে তা বোঝা যায় যখন কোনো নারী এককভাবে বা যৌথভাবে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে তখনই পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা তার উপরে রে রে ওঠে। যুগে যুগে প্রথম থেকেই সমাজে একটি শ্রেণি সমূহ সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আর অপর শ্রেণী উপেক্ষিত থেকে যায়। ঋকবেদেও বলা হয়েছে নারী সন্তানের জন্ম দেবে, পালন করবে এবং স্বামীর অনুগামিনী হবে। মনুসংহিতায় মনওু বলেছেন, নারী চিরন্তন অপ্রাপ্ত বয়স্ক, বাল্যে পিতার অধীন, যৌবনে স্বামীর অধীন আবার বার্ধক্যে পুত্রের অধীন।
লিঙ্গগত কারণেও নারীকে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। ভারতীয় বাঙালি সমাজের দেখা যায় বিবাহের পর নারীকেই তার স্বজন ছেড়ে যেতে হয় পতিরূপী পুরুষের বাড়িতে, পতির বাড়িতেই করতে হয় জীবন অতিবাহিত। শুধু তাই নয় ওই পরিবারের সবাইকে মানিয়ে গুছিয়ে চলতে হয়। কন্যাভ্রূণ হত্যা - এই বৈষম্যের কারণেই। শিক্ষাক্ষেত্রেও বঞ্চিত হতে হয় নারীকে উচ্চশিক্ষা থেকে, অধিকারের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। শুধু তাই নয় বর্তমান সমাজে লজ্জাজনক একটি ঘটনা প্রায়শই ঘটে চলেছে সেটি হল ধর্ষণ। কোথাও-না-কোথাও নারী নিগৃহীতা হচ্ছে, শ্লীলতাহানীর শিকার হচ্ছে। অনেকের ধারণা নারী পুরুষের ভোগ্য বস্তু। স্বাভাবিকভাবে নারী যদি পুরুষের প্রস্তাবে রাজি না থাকে তাহলে জোর করেই তা আদায় করতে হবে। এই বলপূর্বক আধিপত্য বা অধিকারবোধ লিঙ্গ বৈষম্যের কারণেই সম্ভব হচ্ছে।
তবে নারী আজকের অর্ধেক মানবীয় সত্তা। নারীকে বাদ দিয়ে কোন কিছু করা অসম্ভব। নারীই মাতা, কন্যা, ভগিনী এবং সহধর্মিণী। তাই নারীর অধিকার রক্ষায় নারীর মর্যাদা বিষয়ক কমিশন গঠিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালকে ‘আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ’ হিসাবে ঘোষিত করা হয়েছে। এবং ২০০৫ সালে পাশ হয়েছে ‘নারী নিগ্রহ সুরক্ষা আইন’। তবে আধুনিকীকরণ ও পাশ্চাতায়ন বিশ্বায়নে নারী আজ অনেকটা এগিয়ে মর্যাদার অধিকারী। শিক্ষিত ও সমসাময়িক হালহকিকত সম্পর্কে নারী আজ সজাগ ও বিশ্বের দরবারে অনেকটা জায়গা করে নিয়েছে।
শিক্ষার ক্ষেত্রেও বৈপরীত্য মূলক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। উনিশ শতকে নারী শিক্ষার প্রধান কারণ ছিল স্বামীর উপযুক্ত সঙ্গী হওয়ার জন্য আর একুশ শতকেও প্রয়োজন হয় প্রতিষ্ঠিত পাত্রের জন্য নম্র গৃহবধূ কিন্তু ভারতীয় দর্শনে বিপরীত ভাবনা লক্ষ্য করা যায় এখানে নারীকে 'আদ্যাশক্তি' দেবী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে নারী শিক্ষার জন্য উনবিংশ শতকে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ মনীষীরা নানা আন্দোলনে নারী শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, 'কোন জাতির প্রগতির শ্রেষ্ঠ মাপকাঠি নারীদের প্রতি তার মনোভাব' তিনি আরো বলেছেন, 'মেয়েদের পূজা করেই সব জাতি বড় হয়েছে, যে দেশে যে জাতে মেয়েদের পূজা নেই সে দেশ সেই জাত কখনও বড় হতে পারেনি কস্মিনকালে পারবেও না'। এই নারী ভাবনা সম্বল করেই নারী শিক্ষা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রচন্ড আলোড়ণ শুরু করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী,রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ মনীষীরা। উনবিংশ শতকে স্ত্রীশিক্ষাকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ রাখা হয়েছিল।
কিন্তু বিংশ শতকে নারী মুক্তির জন্য নারী শিক্ষার যেমন প্রয়োজন আছে তেমনি প্রয়োজন নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা--- এই বিষয়টি উপলব্ধ হয়। বিশ শতকে নারী শিক্ষার পক্ষে একমাত্র বেগম রোকিয়া ঘোষণা করলেন, 'যে পরিশ্রম আমরা স্বামীর গৃহকোণে ব্যয় করি সেই পরিশ্রম দ্বারা কি স্বাধীন ব্যবসা করিতে পারিব না?' বলা বাহুল্য ভারতের মতো দেশকে একবিংশ শতকে টিকিয়ে রাখতে হলে নারী শিক্ষার সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সমাজ নিয়ন্ত্রী ক্ষমতা প্রদান করা প্রয়োজন। অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব প্রদান আবশ্যক।
সংসারের নিত্য লোক যাত্রায় নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য একথা নিঃসন্দেহে সবাই স্বীকার করবে। সন্তান জন্ম দেওয়া বা প্রতিপালন করার ব্যাপারে কোনো শোষন নেই বা অবমাননা নেই বরং এতে আছে জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষার গৌরব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলেছেন, 'কথাটা শুনতে ভালো লাগুক বা না লাগুক, জননী হওয়াই় স্ত্রীলোকের অস্তিত্বের প্রধান সার্থকতা এবং প্রকৃতি সেই কারণেই তাহাকে অঙ্গে প্রত্যঙ্গে পুরুষ হইতে স্বতন্ত্র করিয়া গড়িয়াছে, যাহাতে করিয়া রমণীর সুস্থ সন্তান উৎপাদন ও শিশু সন্তান পালন পোষণ করিবার শক্তি হ্রাস করে তাহা সমাজ ও প্রকৃতির নিকটে অপরাধ স্বরূপ গণ্য হওয়া উচিত'।
তাই পুরুষের কাম চরিতার্থই শুধু স্ত্রী করে না শরীর ও মনের মিলনের একাত্ম হওয়ার যা আনন্দ তা নিয়ে বাঁচাই হলো দাম্পত্যের মূল উদ্দেশ্য আর এই আনন্দের মধ্যেই থাকে এগিয়ে যাওয়া। পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য ও উপনিষদে বলা হয়েছে নারী পুরুষ প্রকৃতিগত ভাবে আলাদা হলেও তারা একে অপরের পরিপূরক। নারী শব্দটি এসেছে 'নৃ' ধাতু থেকে যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন নারী কথার প্রকৃত মানে নেত্রী ভারত মহিলা অন্যদিকে পুরুষ শব্দটি এসেছে 'পূর' ধাতু থেকে যার মানে পূরণ করা। অর্থাৎ নারী-পুরুষের পার্থক্য হলো একটি বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরটি বৃদ্ধি পায় যেমন মাটি এবং বীজ। একটি সক্রিয় আর একটি নিষ্ক্রিয় একটা চরিষ্ণু আর একটা স্থানু। অর্থাৎ বিপরীত সত্তার সঙ্গে পুরুষের পুরুষত্ব বা পরিপূরণী শক্তি বৃদ্ধি পায় যেখানে, নারী সার্থক সেখানে। আবার রমনী কথাটি এসেছে 'রম্' ধাতু থেকে, এই 'রম্' ধাতুর সঙ্গে 'অন' প্রত্যয় যোগ করলে দাঁড়ায় রমণী। 'রম্' ধাতুর অর্থ আনন্দ বা তৃপ্তি। রমণী সেবা সাহচর্য ও ভালোবাসায় পুরুষকে এমনভাবে উদ্দীপ্ত বা রঞ্জিত করে যাতে পুরুষ রমণীতে নত হয়ে উদ্বেলিত হয় আর আর একে অপরের দ্বারা পুষ্ট ও হৃষ্ট হয় এবং এই মিলনেই হয় সুসন্তানের জন্ম। পতির ধর্মকর্মে সর্বতোভাবে স্ত্রী অংশগ্রহণ করে বলে স্ত্রীকে 'ধর্মপত্নী' বলে। এছাড়া ভার্যা, অর্ধাঙ্গিনী, সহধর্মিনী ইত্যাদিও বলা হয়। স্ত্রী পতিকে পালন ও রক্ষণ করে বলে তাকে 'পত্নী' বলা যায় আবার পুরুষ যার ভিতর প্রবিষ্ট হয়ে নিজেকে জন্মগ্রহণ করায় বলে স্ত্রীকে 'জায়া'বলা হয় অন্যদিকে অন্যের ধর্ম রক্ষা করাই যার ধর্ম রক্ষা হয়।
সেই সহধর্মিনী আবার স্ত্রীকে ধারণ করে পুরুষের অস্তিত্ব সংরক্ষিত হয় এবং স্ত্রী পুরুষের মনোবৃত্তির অনুসারিণী হলে তাকে বলা হয় ভার্যা। এইভাবে নারী স্বামী বা পতির বৃত্তিগুলোকে পুষ্ট ও সংবর্ধনা করে ক্রমশ নারী হয়ে ওঠে অন্যদিকে নারীর মতো পুরুষকেও পুরুষ হয়ে উঠতে হয়, তার জন্য কতগুলো কর্তব্য বা আচরণ পালন করা উচিত। তৈত্তিরীয় উপনিষদে পুরুষের কিছু অবশ্য পালনীয় কর্তব্য-কর্মের কথা বলা হয়েছে----
শাস্ত্র ও কর্ম বিষয়ক জ্ঞান, সত্যকথন, তপস্যা, বাহ্যেন্দ্রিয় দমন, চিত্ত সংযম, অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞানুষ্ঠান, অতিথি সেবা, লৌকিক আচার পালন, সন্তান উৎপাদন-- এই সমস্ত বিষয়ে অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা অবশ্য কর্তব্য। এইভাবে কর্তব্যকর্মের মধ্য দিয়ে পুরুষ পুরুষ হয়ে ওঠে এবং এই হয়ে ওঠা যখন সাঙ্গ হয় তখনই তারা পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক হয় এবং সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়। তাই স্ত্রী হওয়া, মা হওয়া মেয়েদের স্বভাব, দাসী হওয়া নয়। নারীর স্বভাবে ভালোবাসা, সহজ নমনীয়তা বেশি। স্নেহ আছে বলেই সন্তান সেবা করে, এর মধ্যে দায় নেই, প্রেম আছে বলেই স্ত্রী স্বামীর সেবা করে, এর মধ্যেও দায় নেই কিন্তু দায় এসে পড়ে তখনই যখন স্নেহপ্রেমের সম্বন্ধ স্বাভাবিক নয়। ভালোবাসার ধর্মই আত্মসমর্পণে সুতরাং তার গৌরবও সেখানে। কিন্তু বর্তমানে নারী শ্রেয় হয়ে উঠতে অপারগ। তার প্রাণের প্রেমের ভালোবাসার গ্রন্থিতে টানের অভাব দেখা দিয়েছে। স্বামী স্ত্রীর প্রাণে প্রাণে বন্ধন নেই, নারী হয়ে ওঠার সাধনায় পড়েছে ছেদ অথচ উভয়ই উভয়কে কাছে পাওয়ার তীব্র কামনা আছে কিন্তু এষণা বা অভিপ্সার টান নেই কিন্তু নিষ্প্রাণ আচার-অনুষ্ঠানকে মানতে হচ্ছে বলে একটা বিদ্বেষ জন্ম নিচ্ছে আর এই বিদিষ্ট স্বামী-স্ত্রীর মিলনে খিটখিটে, খিন্ন শিশুর জন্ম হয়। স্বামীর আদর্শপ্রাণতার বৈশিষ্ট্য সন্তানের মধ্যে গমন করছে না ফলে শিশুর মধ্যে সহজাত বৈশিষ্ট্য লক্ষিত হচ্ছে না।
বর্তমানে বিশ্বায়নের অর্থ হলো একা চলার রীতি। আবার অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনেই চাকরি করে, সন্তানকে পড়ায় ইংরেজি স্কুলে। বাবা-মা ছাড়া একা একা বড় হয় শিশু, সে কাউকে বন্ধু ভাবতে পারেনা। স্নেহ, ভালোবাসা, ত্যাগ, বিশ্বাস ও মূল্যবোধ---- এই কথাগুলি তার কাছে অজানা ফলে সে পুঁথিগত বিদ্যায় পারদর্শী হলেও সৌজন্য ও শিষ্টাচার শিখছে না এবং হয়ে উঠছে রুক্ষ,জেদি, উচ্ছশৃংখল ও অবাধ্য। ভোগবিলাসী একাকিত্বের বিশ্বায়নে নারী পার্টি, আড্ডা নিয়ে মেতে থাকে যেমন তেমনি সন্তানও বাংলা জানে না বলে গর্ববোধ করে এবং নিজেকে আবদ্ধ করে রাখে বিশ্বায়িত সংস্কৃতিতে ফলে ভারতীয় বাঙালি সংস্কৃতিকে সহজে মানিয়ে নিতে পারছে না, দেখা দিচ্ছে ইগোর সমস্যা। এই কারণে পারিবারিক জীবন অশান্তিময় হয়ে উঠছে।
প্রসঙ্গত স্মরণীয় আমরা জমির ফসল উৎপাদনের যতটা যত্নবান ততটা সন্তান উৎপাদনে যত্নশীল হচ্ছি না। উর্বর মাটিতে উন্নত বীজ বপনে আন্তরিক সহযোগিতার চাষের যত্নে উন্নত ফসল যেমন পাওয়া যায় ঠিক তেমনি আদর্শপ্রাণ পতি-পত্নীর সেবা ও সাহায্য উদ্দীপনার মিলনে সুসন্তান লাভ হয়। অথচ এই বিশ্বায়নের যুগে সেই ঐকান্তিক প্রেম ও আদর্শপ্রাণতার অভাবে সুসন্তান আসছে না। অথচ আমরা দেখেছি এই ভারতবর্ষের মাটিতে কত মুণি ঋষি, বিখ্যাত মহৎ মনীষীর জন্ম হয়েছে কিন্তু আজ সেই মহৎ গুণান্বিত সন্তানের জন্ম হচ্ছে না তাই পতি-পত্নীর সম্পর্ক দায় নয়, একান্তভাবেই প্রেমের, মনের। আর যখন এই পরিপূরক সত্তার প্রাণে প্রাণে মিলন ঘটবে তখনই এই মাটিতে আবার মহান আত্মারা জন্ম নেবে। ভারতবর্ষ আবার হৃত গৌরব ফিরে পাবে। শুধু তাই নয় মানুষের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্যই হলো বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়া আর এই বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়া সার্থক হয় একটি আনন্দময় সুন্দর সুস্থ জীবনকে ঘিরে। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, 'সর্ব প্রকার বিস্তারই জীবন। সর্বপ্রকার সংকীর্ণতাই মৃত্যু। যেখানে প্রেম সেখানেই বিস্তার; যেখানে স্বার্থপরতা সেখানেই সংকোচ। অতএব প্রেমই জীবনের একমাত্র বিধি। যিনি প্রেমিক তিনিই জীবিত, যিনি স্বার্থপর তিনি মৃত'।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment