Shaishaber Sukha Shajya Short Story by Khushi Sarkar - Nabo Mukul

Latest

Bengali poem, Short story, essay and modern poems as education base

30 Oct 2018

Shaishaber Sukha Shajya Short Story by Khushi Sarkar

Shaishaber Sukha Shajya Short Story by Khushi Sarkar

Shaishaber Sukha Shajya Short Story by Khushi Sarkar

Shaishaber Sukha Shajya Short Story has been written by Khushi Sarkar. Readers you can read here below the short story of Jayita who looks the infant village, And so many villagers came to see her with lot of childhood love.

শৈশবের সুখ শয্যা ছোট গল্প লিখেছেন লেখক খুশী সরকার

ছোটগল্প

শৈশবের সুখ শয্যা
খুশী সরকার

সারাদিনের ক্লান্তি মেখে ধীর পায়ে হাঁটছে জয়িতা। শরীরটা যেন বৃষ্টি ঝরা মেঘের মতো, এগোচ্ছিল হালকা পায়ে । কোনোমতে বাড়ি ঢুকেই শাড়ি চেঞ্জ করে বসলো সোফাতে। মিনা মাসি হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে বলে, চা দেবো দিদিমণি?
----হ্যাঁ দাও, দাদাবাবু এখনো ফেরেনি ?
------একটু আগেই ফিরেছে দিদিমণি। চা খেয়ে কোথায় যেন বেরুলেন।
----ও আচ্ছা, তুমি যাও। চা-টা তাড়াতাড়ি করে এনো। বড্ড ক্লান্ত লাগছে গো। জয়িতা চায়ে চুমুক দিতেই জয়দীপ একটা কাগজ হাতে ঘরে ঢুকতেই জয়িতা জানতে চাইল, কি গো, কোথায় গিয়েছিলে ?
-----এইতো তপনের কাছে গিয়েছিলাম লেখাটা নিয়ে।
-----ও শোনো না,সামনের ছুটিতে কোথাও বেরিয়ে আসি,যাবে? বড্ডো একঘেয়েমি লাগছে গো ।কতদিন কোথাও যায় না, বলো? মাত্র কয়েকটা দিন ছুটি, যাবে?
-----কোথায় যেতে চাও?চলো, আমার কোনো আপত্তি নেই।
-----নেই তো! তবে কাল‌ই চলো। আমার বড্ড ইচ্ছে করছে আমার শৈশবের গ্রামে একবার যেতে।
সারারাত আনন্দে আবেগী জয়িতার ঘুম এলোই না, এপাশ-ওপাশ করে প্রতীক্ষার প্রহর গুণে চললো। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। স্বপ্নে সূর্য উঁকি মারে পুব আকাশে। জয়দীপ খানাকুল স্টেশনে নেমে রওনা দেয় পায়ে হেঁটে। এক মাইলের মধ্যে শৈশবে ফেলে আসা পান্ডুয়া গ্রাম। আল পথ আজ আর নেই, পিচে ঢালা পাকা রাস্তা। দুই ধারে নাম না জানা হলুদ ফুল, পুকুরে শালুক-শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য। হঠাৎ চোখে পড়ে জয়িতার, সামনে গরু নিয়ে যাচ্ছে মফিজ কাকা।

-----এ্যাই, একটু পা চালিয়ে চলো তো। ওই মফিজ কাকার সাথে কথা বলবো। জয়িতা জয়দীপ কে উদ্দেশ্য করে বলে, জানো তো, মফিজ কাকা কি ভালো!  আমাকে পড়াশোনার জন্য কত যে উৎসাহ দিয়েছে কি বলবো। বার বার বলতো, মন দিয়ে পড়াশোনা কর্ মা, তুই ঠিক পাশ করবি।
-----ও কাকা কাকা-আ, আমাকে চিনতে পারছো আমি তোমাদের জয়িতা গো। গরুর খুরের ধুলো চোখের সামনে থেকে হাত দিয়ে সরিয়ে বলে, কে? কে রে তুই? সামনে ঝুঁকে চোখটা বারবার দুই হাতে কোচলে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে, কিছুক্ষণ পরেই ঠোঁটে হাসি এনে বলে, ও জয়িতা তুই কেমন আছিস, মা? এতদিনে আমাদের মনে পড়েছে তোর? বাঃ বাঃ, খুব ভালো লাগছে। চল্ যখন সবাই জানবে তুই এসেছিস তখন দেখবি, সবাই তোকে দেখতে ছুটে আসছে।

সত্যি, গ্রামে ঢুকতেই চারদিক থেকে কৌতূহলী চোখ যেন ছুটে আসতে লাগলো তার দিকে। অনেকেই জয়িতার চেনা অনেকেই আবার অচেনা ভিড় করে দাঁড়ায় তার চারদিকে। অফুরন্ত আনন্দের ঢেউ আছড়ে পড়ছে তার মনের কিনারে। আনন্দে কাশবন‌ও দোলাচ্ছে মাথা। চিক্ চিক্ করে জ্বলে ওঠে জয়িতার চোখের তারা। অবাক বিস্ময়ে প্রত্যেক মুখে খুঁজে পেতে চায় জয়িতা তার শৈশবের চেনা মুখ। হঠাৎ চোখে পড়ে ওই তো, যামিনী জেঠু। ভিড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করে জয়িতা। জয়দীপেরর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় । হেলে যাওয়া কোমড়ে ভর করে দুই হাতে জয়িতার মুখ নেড়ে আদর করে জামিনী জেঠু বলে, ভালো আছিস তো,মা? আজকাল আর চোখে ভালো দেখি না,মা তবু তোর কথা মধুর কাছে যখন শুনলাম তুই এসেছিস, তখন আর থাকতে পারলাম না। তুই চাকরি পেয়েছিস জেনে ভীষন খুশী হয়েছি। যখন জোর করেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলি তখন মনে হয়েছিল, মেয়েদের বেশী পড়াশোনা করে কি হবে? সেই তো যেতে হবে পরের বাড়ি কিন্তু এখন বুঝেছি,সেটা আমার ভুল ধারণা ছিল। তুই আমার চোখ খুলে দিয়েছিস, মা।আমায় ক্ষমা করতে পারবি তো মা! হতচকিত হয়ে যামিনী জেঠুর বুকে মাথা রেখে বিনয়ী সুরে বলে জয়িতা, ছি ছি জেঠু ,অমন কথা কেন বলছো? সব সময় সন্তানের ভালোর জন্য সব বাবা-মা ই ভাবে। তুমি তো আমার জেঠু হও, হয়তো আমার মঙ্গল চেয়েই সে কথা বলেছিলে। গ্রামে তখন কেউ তেমন পড়াশুনা জানত না। আসলে পড়াশোনা না জানলে তো জ্ঞানের চোখ খুলে না, ভালো মন্দ বিচার করাও যায় না। তাই হয়তো------- তুমি ও সব কিচ্ছু ভেবো না, আর যতটুকু বড় হতে পেরেছি তা তো তোমাদের আশীর্বাদেই, বলো। আচ্ছা কাকা, ওই ভিটাটা ফাঁকা কেন? ওখানে বিশ্বনাথ দা বৌদিকে নিয়ে থাকতো না? ওরা কোথায় গেছে?

-----ওই ফাঁকা ভিটাটার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে দেবু বলে উঠল। আপনি জানেন না?
-----না তো। কিচ্ছু জানি না, জয়িতা মাথা নাড়ে। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় তার একমাত্র ছেলে সন্তু দুষ্কৃতীর গুলিতে মারা যায়। সেই শোক সামলাতে না পেরে স্বামী- স্ত্রী দুজনেই গ্রাম ছেড়ে উঠে গেছে ভিন্ দেশে।
-------ও তাই নাকি? বিষন্নতায় বিভোর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে জয়িতা। হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে শূন্য ভিটায়। স্মৃতিতে ভেসে ওঠে সেই ছোট্টবেলা যখন এক পা, দু পা করে হাঁটছে সন্তু তখন মা একটু বক দিলেই কাঁপা পায়ে এসে জড়িয়ে ধরত চুরিদার, চোখ দিয়ে জল পড়তো। অমনি 'সোনা বাবা', 'সোনা বাবা' বলে কোলে নিয়ে কত্ত আদর করত। আর সন্তু যেন নিরাপদ আশ্রয়ে এসে মাথা নেতিয়ে দিত ওর ঘাড়ে, চোখ জলে ভরে যায় জয়িতার। একটু সুস্থির হয়ে সামনে তাকাতেই দেখে ও পাড়ার কেকনি বুড়ি তার সামনে দাঁড়িয়ে। মুখে জোর করে হাসি টেনে বলে ঠাকুমা, তুমি? দুই হাতে বুড়ির চোখ চেপে বলে, বলো তো কে আমি?
-----তোর গলার স্বর শুনেই বুঝেছি আমি। আমাদের সোনার মেয়ে জয়িতা় এসেছে। আয় দিদা, আমার কাছে আয় । একটু ভালো করে দেখে চোখ জুড়াই।কত দেখতে ইচ্ছা করছিলো তোকে। কতবার বাবুলকে বলেছি একবার তোর সঙ্গে দেখা হলে যেন আসতে বলে। আমাদের আম বাগানে আমি কুড়াতে যেতিস, কত বকা দিয়েছি। কত কথা বলেছি কিন্তু এখন তো বয়স হয়েছে দিদা, এখন বুঝতে পারি তখন তোদের বকে ভুল করেছি। আমের মতো একটা মিষ্টি ফল বাচ্চারা তো ভালবাসবেই অথচ আমি স্বার্থপরের মত তোদের তাড়িয়ে দিয়েছি বাগান থেকে।
----না, না দিদা,অমন কথা বলো না। আমি ও সব ভুলে গেছি কিন্তু তুমি তখন বকেছিলে বলেই তো বুঝেছি যে, কারো জিনিস না বলে নিতে নেই এবং নির্লোভ হতে পেরেছি, এইটুকু বোধ তো তোমার জন্যই হয়েছে।
কথা বলতে বলতেই চোখে পড়ল শিবুদার বউ হন্ হন্ করে এগিয়ে আসছে তার দিকে, হাতে একখানা থালা তাতে পিঠা ও মোয়া মুরকি আর এক গ্লাস জল।
------ও মা, তুমি কেমন করে জানলে আমি এসেছি? চোখে ভেসে উঠলো শিপ্রা বৌদির আন্তরিকতা। এখনো সে আগের মতই সেই আন্তরিকতা
------কি গো,অত কী ভাবছো? দুষ্টু হাসি হেসে বলে,নাও,নাও এগুলো দু'জনে খেয়ে নাও তো দেখি। সেই কখন এসেছো পেটে কিছু দিতে হবে তো,না কি,শুধু বকবক করলেই চলবে। আমাদের এই গাঁয়ে তো তেমন মিষ্টির বড় দোকান নেই ভাই, তাই হাতে বানানো এগুলোই খাও। তৃষার্ত মরুভূমিতে যেন আন্তরিকতার এক পশলা বৃষ্টি তাকে ভিজিয়ে দিল। আবেগে আপ্লুত হয়ে দুজনেই খেয়ে নিল। খুশিতে তার মন ভরে গেছে। তবুও চোখের তৃষ্ণা যেন মেটে নি তার। চোখ যেন আরও একজনকে খুঁজছিল ভিড়ের মধ্যে। সবাই দেখছিল তাকে অথচ সে খুঁজছিল অন্য আর আর একজনকে। কিন্তু নামটা তার মনে পড়ছিল না। হঠাৎ মনে পড়ে গেল, সমীরউদ্দিন। হ্যাঁ,সমির‌উদ্দিন। জয়িতার ছোটবেলার রূপকথার গল্পদাদা অর্থাৎ সমীরদা। সে সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করে সমিরদাকে দেখছি নাতো? এত ভিড়ে তাকে দেখতে না পেয়ে তার মনটা যেন কেমন হু হু করে উঠছিল ক্ষণে ক্ষণে। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর হঠাৎ একজন বলে উঠল, ও তুমি সেই সমিরদারর কথা বলছো, যে তোমাদের গল্প শোনাতো? 'শোনাতো'শব্দেই তার মনটা যেন কেমন উদাস হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে উদ্বিগ্ন ভাবে জিজ্ঞাসা করল, হ্যাঁ, হ্যাঁ তার কথাই তো বলছি। হঠাৎ সে শিপ্রাবৌদিকে উদ্দেশ্য করে বলল, জানো তো বৌদি কতদিন স্বপ্নে তার রূপকথার গল্প শুনি সেই তো আমার ছোট্টবেলার গল্প বলা আপন দাদা। সে কী এখনো জানতে পারেনি,যে আমি এসেছি?
------না, না, জেনেছেো নিশ্চয় কিন্তু আসবার যে তার ক্ষমতা নেই গো। অমনি জয়িতা আতঙ্কিত হয়ে বলে,
-----কেন কি হয়েছে তার?
-----দীর্ঘদিন ধরে সে শয্যাশায়ী। ফুসফুসে ক্যান্সার, কিছু খেতে পারে না তবু তো বড় ছেলেটা খুব করছে গো। যে টুকু জমি ছিল, বিক্রি করে এতদিন চিকিৎসা চালালো আর পারছে না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শিপ্রা বলে, কেবল শুয়ে শুয়ে দিন গোনা!
-----আমি এখনি যাব তাকে দেখতে।যাবো বলেই তীব্রবেগে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসে সে।

সমিরদার বাড়ির সামনে এসে দেখে প্রচুর ভিড়। কি ব্যাপার, এত লোক কেন? অজান্তেই কেঁপে উঠে বুকটা। জয়িতা দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় ভিড়ের ভিতর হঠাৎ চোখে পড়ে সাদা কাপড়ে ঢাকা একটি মৃতদেহ। কে মারা গেছে গো? উত্তর পাওয়ার আগেই হঠাৎ বাতাসে উড়ে যায় সাদা কাপড়টা। মুখটা দেখেই চিনে ফেলে।এ কি ?সমীরদা তো। বাকরুদ্ধ জয়িতা দাঁড়িয়ে থাকে বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছিল একটা চাপা কান্না। স্মৃতির পাতায় পর পর ভেসে উঠছিল সেই ছোট্টবেলার রূপকথার গল্প' বলা সমিরদাকে। কত সহজে বলে যেত রূপকথার গল্প। সেই হাসিমুখটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে অথচ আজ সেই বকবক করা সমিরদা অত্যন্ত শান্তভাবে শুয়ে আছে! কোন হাসি নেই, কোন চঞ্চলতা নেই। নীরব-নিথর যেন এই জগতের সব মায়া মোহ ত্যাগ করে এখন পরম শান্তি শয্যায় শায়িত। আর কোন ব্যথা নেই, কোন কষ্ট নেই, কারো উপর মান-অভিমান নেই। সব শান্ত। সেই মুহূর্তে মনের মধ্যে জেগে উঠলো সেই ছোটবেলায় সমিরদার কাছে রূপকথার জগতের যে রাজপুত্তুরের গল্প শুনেছিল সেই রাজপুত্র তার অলৌকিক ক্ষমতায় সোনার কাঠি রুপোর কাঠি বদলে দিয়ে রাজকন্যাকে জাগিয়ে ঘোড়ায় চাপে উড়ে যাচ্ছিল সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ের ভিন্ দেশে। এই মুহূর্তে জয়িতার মনে হলো সেই রাজপু্ত্র‌ই যেন আজ জীবনের সমস্ত হিসাব নিকাশ শেষ করে অনন্তের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে ।

বেদনায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জয়িতা রাজদীপকে বলে, চলো, আমার শৈশবের সুখ শয্যায় যে সুখের অন্বেষণে এসেছিলাম, সেই চির সুখের সন্ধান আমি পেয়েছি।

Shaishaber Sukha Shajya Short Story by Khushi Sarkar.

No comments:

Post a Comment