Nijeke Jano (Know Yourself) Written by Khushi Sarkar - Nabo Mukul

Latest

Bengali poem, Short story, essay and modern poems as education base

18 Oct 2025

Nijeke Jano (Know Yourself) Written by Khushi Sarkar

Nijeke Jano (Know Yourself) Written by Khushi Sarkar

Paragraph Title — Nijeke Jano, (Know Yourself)
Author — Khushi Sarkar
Genre — Paragraph

Nijeke Jano (Know Yourself) Written by Khushi Sarkar

The article 'Know Yourself' is written following the example of Sri Sri Thakur Anukul Chandra.

'Know Yourself' (Nijeke Jano) — 'Only people with true ideals can build a healthy society and an ideal country'

'নিজেকে জানো' প্রবন্ধটি শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র অনুসরণে রচিত।
'নিজেকে জানো' — 'সৎ আদর্শকেন্দ্রিক মানুষ‌ই গড়ে সুস্থ সমাজ এবং আদর্শ দেশ'

প্রবন্ধ — নিজেকে জানো
খুশী সরকার

মানুষের পরম আকাঙ্ক্ষিত ধন সুখ, শান্তি আর আনন্দ। প্রত্যেকের হৃদয়ের অন্তর্নিহিত চাওয়া বাঁচা এবং বাড়া। এই এই বেঁচে থাকা এবং হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষিত চাওয়াকে পাওয়া পাওয়ার সঙ্গে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বৃদ্ধির দিকে তা কিন্তু সহজ পথে আসে না। সুস্থ-সবলভাবে অভিপ্সীত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে চায় সৎ আদর্শমুখী চলন। আর এই আদর্শমুখী পথে চলতে গেলে সৎ আদর্শের জীবন্ত বিগ্রহকে জীবনে গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন — যিনি তোমার পরম ইষ্ট অপূরয়মাণ,বৈশিষ্ট্যপালি এবং দ্রষ্টাপুরুষ। যার মধ্যে ঐশ্বর্য,বীর্য,শ্রী জ্ঞান যশ ও বৈরাগ্য --এই ছয়টি বৈশিষ্ট্যের মিলন ঘটেছে তিনিই পুরুষোত্তম, তাকে বাদ দিয়ে কেবল প্রবৃত্তি কেন্দ্রিক জীবনে সাফল্য আনা যায় না। সৎ আদর্শকেন্দ্রিক মানুষ‌ই গড়ে সুস্থ সমাজ এবং আদর্শ দেশ।

সমাজে আজ নেমে এসেছে মূল্যবোধ অবক্ষয়ের অন্ধকার। পরিবারগুলো হয়ে উঠেছে অশান্তির গর্ত। অশান্তি পূর্ণ অবক্ষয়িত সমাজের উন্নয়নে চায় একমাত্র সৎ আদর্শকেন্দ্রিক মানুষ। কারণ ব্যক্তি বা ব্যষ্টির উন্নতি না হলে সমষ্টির উন্নয়ন সম্ভব নয়। ব্যষ্টি থেকেই তো সমষ্টির সৃষ্টি। চারিত্রিক ঐশ্বর্যমণ্ডিত মানুষ হলেই এই অবক্ষয়িত সমাজের শ্রী সমৃদ্ধি বৃদ্ধি হবে। মানুষ সুখ শান্তি আর আনন্দময় জীবনের পথে এগিয়ে যাবে।

জীবনে সুখ শান্তি আর আনন্দ পেতে গেলে প্রথমে জানতে হবে নিজেকে। শ্রী শ্রী ঠাকুর এ প্রসঙ্গে বলেছেন যেমন লেখাপড়া শুরু হয় অক্ষর পরিচয়ের মাধ্যমে তেমনি ধর্মরাজ্যে প্রবেশ শুরু হয় আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে। আর এই আত্মবিশ্লেষণ সম্ভব একমাত্র দীক্ষার মাধ্যমে। আলোচনা প্রসঙ্গে নামক গ্রন্থের ষষ্ঠ খন্ডে ঠাকুর বলেছেন মানুষ যত ভালো কাজই করুক না কেন বৃত্তি নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা নিজের বৃত্তিগুলোকে চিনতেই পারেনা আসলে কি সেটা আমাদের জানা প্রয়োজন। এগুলো আসলে আমাদের মনে সহজাত সংস্কার রূপে সুপ্ত অবস্থায় থাকে।

জন্মসূত্রেই ৯টি চিত্তবৃত্তি বা স্থায়ী ভাব আমাদের মনে থাকে। এগুলো হলো 'রতি, হস্, শোক, ক্রোধ, উৎসাহ, ভয়, জুগুপ্সা বিস্ময় এবং শম।' এই চিত্রবৃত্তি বা ভাবগুলিকে পুষ্ট করে কতগুলি ব্যভিচারী বা সঞ্চারী ভাব। এগুলো মনের মধ্যে স্বল্পকালের জন্য প্রকাশ পায় এদের সংখ্যা ৩৩ টি কিংবা তারও বেশি তবে এ ৩৩ টি সঞ্চারী ভাব হল- করুণা বা দয়া, উপেক্ষা, ক্ষমা, পবিত্রতা, প্রীতি, প্রমাদ, প্রসন্নতা, ঈর্ষা, দম্ভ, লোভ, নিন্দা, মান, অপমান, অভিমান, অনুতাপ, দম, ত্যাগ, শ্রদ্ধা, ভক্তি, সন্তোষ, ভ্রান্তি, ছলনা, খলতা, সহিষ্ণুতা, কোমলতা, কাঠিন্য, স্বাতন্ত্র্য, প্রগতি, বিদ্রূপ, বিদ্রোহ, সাম্য, সেবা প্রভৃতি। এইসব চিত্রবৃত্তির সাহায্যে আমাদের মনের ভাব এক এক সময় এক এক রকম হয়। এদের মধ্যেই আমাদের ছয় জন শত্রু আছে। তারা হলো — কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য।

এই বৃত্তিগুলো আমাদের কোনো ভালো কাজ করতে বাঁধা দেয়। এরা চুপিসারে মনের মধ্যে এমন করে থাকে যা আমরা অনেক সময় চিনে উঠতে পারি না।

'আর্য প্রাতিমোক্ষ' গ্রন্থের ৩২৩০ বাণী সংখ্যায় ঠাকুর বলেছেন, 'যে প্রবৃত্তির সংঘাত বা প্ররোচনা তোমাকে শ্রেয় বা ইষ্ট হতে বিচ্ছিন্ন করেছে বা বিচ্ছিন্ন করতে চায় — তাই হচ্ছে তোমার নিয়ামক বৃত্তি।' অর্থাৎ আমরা ষড়-রিপুর বশীভূত হয়ে অনেকসময় আত্মস্বার্থে মগ্ন থাকি। এই আত্মস্বার্থমগ্নতা আমাদের ইষ্ট বা গুরু থেকে আলাদা রাখতে চায় অর্থাৎ এরাই জীবনে প্রাধান্য পেতে তৎপর হয়।

গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, 'সর্বধর্মাণ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ' এই কথায় শ্রী শ্রী ঠাকুর আর্য প্রতিমোক্ষ গ্রন্থের ৩৫৪৩ বাণী সংখ্যায় বললেন অন্যভাবে —"যে যে প্রবৃত্তি ও প্রয়োজনে তুমি অনুবদ্ধ হয়ে আছ, বিধৃত হয়ে আছ , আমা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে, তা ত্যাগ করে কেবল আমাকে বা আমার ইচ্ছাকে বা আমার নির্দেশকে পরিপালন করে চল —"

আমরা ক্ষনিক সুখ সমৃদ্ধির আশায় ষড়রিপুর বশীভূত হয়ে ঠাকুর থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখি। এই ষড়রিপুকে অর্থাৎ আমাদের ক্ষতিকারক শত্রু বৃত্তিগুলোকে সংযম দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখে একমাত্র ঠাকুরকে মাথায় নিয়ে চলতে হবে।

অনেক সময় এই শত্রু বৃত্তি গুলিকে চেনার পরও আমরা মানসিক উদারতায় সেগুলো সমর্থন করি। এই বিষয়েও ঠাকুর সতর্ক বাণী দিয়েছেন উক্ত গ্রন্থের ৩৭২৯ সংখ্যার বাণীতে। বললেন, "যে ঔদার্য জাহান্নামের পথ মুক্ত করে তা বীভৎস।" এইসব প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়ও তিনিই বলেছেন 'আর্য প্রাতিমোক্ষ' গ্রন্থের ৩৭৫৫ বাণীতে —," যেমন স্রোতে দাঁড়িয়ে স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না তেমনি প্রবৃত্তিতে দাঁড়িয়ে বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না; স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করতে যেমন তার গতির মোড় বাঁকিয়ে দিতে হয় বিহিত কোন দিকে কেন্দ্রায়িত করে তাকে, তেমনি বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে বৈশিষ্ট্যপালী আপূরয়মান কোন কিছুর দিকে সশ্রদ্ধ সম্বেগী হয়ে তার গতিপথকে নিয়ন্ত্রিত করতে হয়।"

আমরা সারাজীবন ধরে যত কথা বলি তার মধ্যে 'আমি/আমার'— এই শব্দ দুটি বেশি ব্যবহার করি।, অর্থাৎ কথায় কথায় আমরা নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই সবার আগে। এই 'আত্মপ্রবণতা' বা 'অস্মিতা' হল ইষ্ট এবং আমার মাঝে একটা আবরণ। আত্ম প্রতিষ্ঠার যে মানসিকতা বা অহংকার তাকে ত্যাগ করতে হবে আমাদের।

এই ত্যাগের কথা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর একটি গানে প্রার্থনা করে বলেছেন, "এ আবরণ ক্ষয় হবে, ক্ষয় হবে, ক্ষয় হবে গো —। এ দেহমন ভূমানন্দময় হবে —' এই আত্ম অহংকার ত্যাগের কথা শ্রী শ্রী ঠাকুর ও বললেন 'আর্য প্রাতিমোক্ষ' গ্র শেষন্থের ১৮৩৬ সংখ্যার বাণীতে — "যদি তাঁকে চাও তো নিজেকে অস্বীকার কর আর তাঁকে প্রতিষ্ঠা কর তোমাতে সর্বতোভাবে।"

আমরা ছোটবেলায় স্কুলে পড়েছি —"আপনারে বড় বলে বড় সেই নয়/লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।"

শ্রীশ্রী ঠাকুর‌ও সে কথাই বলেছেন উক্ত গ্রন্থের ১৪৬০সংখ্যার বাণীতে — "মহাপুরুষ হওয়ার লোভ মানুষকে মহাপুরুষ করে তুলতে পারে কম‌ই বাস্তবে কিন্তু মহাপুরুষের প্রতি বৃত্তিভেদী অচ্যূত সক্রিয় অনুরাগ — মানুষকে স্বভাবতই মহাপুরুষ করে তোলে।" ইষ্টের প্রতি 'সক্রিয় অনুরাগ' জন্মানোর পথে বাঁধা দেয় আমাদের এই অস্মিতা বা অহংবোধ। তাই জন্মে শ্রদ্ধাহীনতা আর এই শ্রদ্ধার অভাবে আমরা ভালো কথা শোনার ধৈর্য রাখতে পারি না বরং শোনার চেয়ে বলার প্রগলভতা দেখায় বেশি এবং তাঁকে মানার চেয়ে না মানার জন্য ফন্দি আঁটি অনেক।

তাই ফন্দিফিকির করে বা অধৈর্য হয়ে তাঁর কথা না শুনলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তার ফলে জীবনের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় না। জীবনে আনন্দ পেতে গেলে ইষ্ট বা সদগুরুকে ধরে থাকতে হবে। এই বিষয়েও 'আর্য প্রাতিমোক্ষ' গ্রন্থের ১০৩৭ সংখ্যার বাণীতে শ্রীশ্রী ঠাকুর বলেছেন,"ধরে দাঁড়াও — ছেড়ে দাঁড়ালে পড়েও যেতে পারো।'

জীবনের প্রধান লক্ষ্য যে আনন্দের সন্ধান সেই সন্ধান পাওয়া সম্ভব একমাত্র ইষ্টের সাধনায়। তাঁর কথা, তাঁর শাসন তাঁর বারণ অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে তাঁর কাছে আত্মনিবেদন করলে আনন্দের আর অভাব হয় না। মান অভিমান আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি বৃত্তিগুলিকে বিসর্জন দিয়ে হয়ে উঠতে হবে ইষ্ট স্বার্থে অর্থাৎ যা কিছু চাহিদা যা কিছু অহংকার সবই হবে তাঁকে ঘিরে, তাঁর স্বার্থ অনুযায়ী। তবেই জীবনে প্রকৃত সুখ শান্তি আর আনন্দ পাওয়া যাবে, এই বিষয়ে শেষে ঠাকুর উক্ত গ্রন্থের ৪৬৯৭ বাণী সংখ্যা তাই বলেছেন, —


"যতদিন না সর্বতোভাবে
প্রিয়স্বার্থী হয়ে উঠতে পারছ —
মান, অভিমান, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদিকে বিসর্জন দিয়ে, উপচয়ী অনুচর্যা অভিদীপনা নিয়ে,—
ঠিক জেনো —
দুঃখেও সুখী হতে পারবে না,
সুখেও সুখী হতে পারবে না,
জীবনকে সুখী করার তুক‌ই
ওই অমনতর প্রিয়ার্থপরায়নতা।"


সমাপ্ত
তাং-২০-০২-২০২৩

No comments:

Post a Comment

Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.