Dukhinir Din Dukhetei Gelo Short Story by Khushi Sarkar
Story Title — Dukhinir Din Dukhetei Gelo
Author— Khushi Sarkar
Genre — Short Story
ছোটগল্পটি লিখেছেন লেখিকা খুশী সরকার
ছোটগল্প -দুখিনীর দিন দুখেতেই গেল
খুশী সরকার
বিদ্যুৎপৃষ্টের মত লাফিয়ে ওঠে শংকর, এ কিরে এ কি দেখছি আমি! নতুন বউ!কি রে প্রকাশ,তোর বউ?
"আমার ঘরে আছে তো কার বউ হবে?"বিরক্ত স্বরে জানায় প্রকাশ।
"আমি তোর বন্ধু, একবার জানালি না আমাকে?
"অবকাশ পাইনি রে।"
"তা না হয় মানলাম কিন্তু বলতেই হচ্ছে,তোর বউ মাইরি বলছি, একদম লক্ষ্মী প্রতিমা মনে হচ্ছে। একদম ঝক্কাস বউ এনেছিস।" এ্যাই বল্ না, বল্ না,কিভাবে জোগাড় করলি? "আজকে মুড নেই।
আরএকদিন সব খুলে বলবো।" হঠাৎ চিৎকার করে শংকর বলে,"ইউরেকা!পেয়েছি পেয়েছি।একটু যেন পুরনো কাসুন্দীর গন্ধ পাচ্ছি, প্রকাশ?"
"হ্যাঁ তা-ই।"
"তাহলে মুড খারাপ কেন?"
"আরে ভাই তুই এখন যা। বললাম তো পরে বলবো।"
"ঠি-ক আছে। বলেই শংকর পা বাড়াতেই হঠাৎ কানে ভেসে এল মিহি সুর, "দাদা এদিকে একটু শুনবেন?"
"কার গলা! বলে ই পেছনে তাকাতে সুশীলা বলে,"আমি দাদা। আমার খুব খিদে পেয়েছে। একটু কিছু------?"
অমনি প্রকাশের দিকে ঘুরে শংকর বলে,"এ কি রে! বউটাকে না খাইয়ে রেখেছিস?"
"ওকে বল্, যারা ওকে বিয়ে দিয়েছে তারা খাবার দিয়ে যাক।"
" মা-নে কি?"
"আমি ইচ্ছে করে ওকে বিয়ে করিনি। জোর করে দিয়েছে ওরা।"
"ওরা কারা?"
"ওকেই বল্,ওরা কারা?
"ও হ্যাঁ আপনার নামটাই জানা হয়নি। কি নাম আপনার? শংকর জিজ্ঞেস করতেই সুশীলা মাথা নিচু করে বলে,"সুশিলা।"
"বাহ্ সুন্দর নাম। প্রকাশের সঙ্গে পরিচয় হলো কিভাবে? আর বিয়েটাই বা হল কিভাবে?
"আপনার বন্ধুর কাছেই সব জানতে পারবেন।" আপাতত কিছু খাবার দিন না?"
"ও-হো,ভুলেই গেছিলাম। দেখি কি পাওয়া যায়?বলতে বলতে চলে যায় শংকর। প্রকাশও বেরিয়ে যায় দোকান গুছিয়ে।
১৩-১৪ বছর বয়সী সুশীলা লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে বসে আছে। ক্ষুধায় অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম সারাদিনে খাবার পেল না এতোটুকু। গরিব ঘরের গ্রামের মেয়ে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করার অভ্যাস আছে তার। কোন্ ছোট্ট বেলায় মারা গেছে বাবা। মা লোকের বাড়িতে কাজ করে বড় করেছে তাকে। কোনোদিন খেতে পেয়েছে তো কোনোদিন পাইনি। তারপর একটু বড় হতেই মা প্রকাশের তুতো দাদা অবিনাশ ডাক্তারবাবুর বাড়িতে ঝিয়ের কাজে রেখে দিল। গ্রামের মেয়ে শহরের অভ্যাস নিয়ম কানুন কিছুই জানে না। ভয় আর জড়তায় মুখে 'রা' ফুটতো না। কত যে গাল মন্দ এমনকি চড় থাপ্পড়ও খেতে হয়েছে কাজ শিখতে এই ডাক্তারবাবুর বাড়িতে তার ইয়ত্তা নেই। চোখের জলে দিন গেছে তার। তবুও ভালো ছিল যদি না ঈশ্বর তাকে এত রূপ দিত। নিজের জন্য তার নিজেকেই ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করে। যদি সে সুন্দরী না হতো তাহলে হয়তো এত কষ্ট পেতে হতো না তাকে।
তার মনে পড়ে, একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের রূপে নিজেই মুগ্ধ হয়ে দেখছিল নিজেকে। সেই রূপ নিয়ে নিশ্চিন্ত মনেই সাদাসিধে সুশীলা দিনরাত কাজ করত ডাক্তারের বাড়িতে। যখন রূপ যৌবনে ডাগর হয়ে ওঠল তখনই পড়ল প্রকাশের নজরে। প্রকাশ ওষুধের দোকানদারি করত দিনে কিন্তু রাত্রি হলেই ফাঁক বুঝে সুশীলাকে জ্বালাতন করতো। প্রলোভন দেখিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চাইত। প্রতিদিনই বিরক্ত করত বলে সুশীলা, তার মাকে ডেকে সব কথা খুলে বলে একদিন।
শান্তি বিপদ বুঝে একদিন কাউকে না জানিয়ে গোপনে এসে প্রকাশকে হাতে-নাতে ধরে জোরে চিৎকার করে বলতে থাকে, কে কোথায় আছেন এখানে আসুন, আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলল।
"অমনি পাশের ক্লাবের ছেলেরা দৌড়ে এসে প্রকাশকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে, "বাছাধন, ডুবে ডুবে জল খাও আর একাদশীর নাম পারো?
এইবার তো আর পার পাবে না।" শান্তি ক্লাবের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে, "এবার আপনারাই বলুন, ও দিনের পর দিন আমার মেয়েটাকে জ্বালাতন করছে।
এই মেয়েকে আমি কেমন করে বিয়ে দিব?"
"আপনি ঠিকই কথা বলছেন। এখন আপনি কি চাইছেন?" ক্লাবের ছেলেরা জানতে চায়।
"আমি মেয়ের কাছ থেকে সব শুনেছি। এখন চাইছি আমার মেয়েকে ওকেই বিয়ে করতে হবে।"
"ঠিক আছে আপনি যা চাইছেন তা-ই হবে "তখন ক্লাবের ছেলেরাই বিয়ের যাবতীয় জিনিসপত্র জোগাড় করে প্রকাশের সঙ্গে সুশিলার বিয়ে দিয়ে দেয়।
বিয়ে হয়ে গেলে ওরা চলে যায় যে যার মতন। সুশিলার মাও চলে যায় বাড়িতে।
এদিকে সুশীলাকে প্রকাশ বিয়ে করতে বাধ্য হলেও সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, কোনোদিনই সে সুশীলাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেবে না।
"দিনের পর দিন তাকে লাঞ্ছনা গঞ্জনা অত্যাচার করতে থাকে। এমন কি কোনো কোনো দিন খেতেও দেয় না। তবু সুশীলা মুখ বুঝে সহ্য করে সব। নানা উপেক্ষার মধ্যেও দুই পুত্র সন্তান হয়েছে তার। তবুও অত্যাচার থামে না। প্রকাশ চেয়েছিল, দুর্বিষহ অত্যাচারে সুশিলা একদিন নিজেই তাকে ছেড়ে চলে যাবে।
কিন্তু সুশীলা সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে সব অত্যাচার সহ্য করছে নীরবে।
প্রকাশ যখন দেখছে কিছুতেই সুশীলা তাকে ছাড়ছে না তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দোকান ঘরে শোবে সে একা। অথচ সেটা প্রকাশ্যে আনা যাবে না কারণ সাক্ষাৎ যম সেই ডাক্তারবাবু বাড়ির পাশেই থাকে। প্রকাশের সিদ্ধান্ত জানতে পেরে সুশীলা অনুনয় করে বলে,"দেখো তোমার আমার মধ্যে সম্পর্ক নাই থাকুক, অন্তত বাচ্চা দুটোর দিকে তাকিয়ে এক ঘরে থাকো।
"কিন্তু প্রকাশ নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। বালিশ বিছানা নিয়ে দোকান ঘরে শোয় প্রকাশ।
সকালে অনেক বেলাতেও প্রকাশ উঠছে না দেখে সুশীলা তড়িঘড়ি দোকান ঘরের দরজা ঠেলতেই চমকে ওঠে। প্রকাশের শোয়ানো শরীরটা অদ্ভুত মনে হওয়াতে সুশীলা ঠেলা দেয়। অমনি গা ঠাণ্ডা অনুভব হতেই জোরে চিৎকার দিয়ে ডাকে ছেলেদের। ছেলেরা ঘুম চোখ রগরাতে রগরাতে আসতেই কেঁদে কেঁদে সুশীলা বলে,তোদের বাবা বুঝি আর নেই রে। এক্ষনি যা,ডাক্তার জেঠুকে ডেকে আন্।" ডাক্তার এসে প্রকাশের নাড়ি টিপে মাথা নেড়ে বলে, "প্রকাশ আর নেই। অনেকক্ষণ আগেই মারা গেছে।"
সন্তানদের নিয়ে সুশীলা প্রকাশের শ্রাদ্ধ শান্তি করে চোখের জলে। সময়ের সঙ্গে সব ফিকে হয়ে যায়। সুশিলা দুই ছেলেকে নিয়ে ওষুধের দোকান আর কিছু বিষয় সম্পত্তি যা ছিল তা দিয়ে চালায় কিছুদিন। তারপর একেবারেই নিঃস্ব কিন্তু দুই ছেলেই তখনও ছোট।
আবার সুশীলা সেই ডাক্তারের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ নেয়। ভাবে ছেলেরা একটু বড় হলেই ওর বাবার ওষুধের দোকানটা খুলতে পারবে। তখন হয়তো তার জীবনে শান্তি আসবে।
এদিকে দুই বেলা ডাক্তারের বাড়িতে কাজ আবার বাড়িতে এসে ছেলেদের জন্য রান্না-বান্নার হাড়ভাঙা খাটুনিতে সুশীলার শরীর ভাঙতে থাকে।
পিন্টু আর মিন্টু মায়ের অবর্তমানে পড়াশোনা ছেড়ে একজন ড্রাগাসক্ত আর একজন বখাটে হয়ে গেল। সুশীলা বেশ বুঝতে পারে ছেলেরা তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
কিন্তু তার আর কিছুই নেই। কাজ না করলে খাবে কি?শরীরের সঙ্গে এবার মনও কষ্টে জর্জরিত হতে থাকে।
শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে গেলে সুশিলা সন্ধ্যার আগেই সেদিন ফিরে এসে শুয়ে পড়ে মাটিতে। দুই ছেলেই ছিল না বাড়িতে।
সন্ধ্যায় পিন্টু এসে মাকে ডেকে বলে, "মা, শুয়ে আছো, খেতে দাও।" কিন্তু সুশিলার 'রা' নেই। অমনি গায়ে হাত দিতেই চমকে ওঠে।
সে সময় মিন্টু এসে পিন্টুকে অস্থির দেখে জিজ্ঞেস করে," কিরে মা'র কি শরীর খারাপ?
পিন্টু কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে ভাই, "ডাক্তার জেঠুকে ডেকে আন। মা বুঝি আর নেই।" ডাক্তার এসে নাড়ি টিপে বলে, তোদের মা আর নেই। "কিংকর্তব্যবিমূঢ় দুই ছেলে। ঘরে টাকা নেই।
সেই ডাক্তারবাবুর টাকাতেই শেষে সুশীলার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। দূর থেকে ভেসে আসছে প্যাঁচার ঘোঁত ঘোঁত শব্দ।
সমাপ্ত
তাং-২৫-০৯-২০২৫
No comments:
Post a Comment
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.