Asat Karmer Fol Short Story written by Khushi Sarkar | 'অসৎ কর্মের ফল' ছোটগল্পটি লিখেছেন খুশী সরকার
The short story 'Asat Karmer Fol' (The Results of Unrighteous Deeds) is written by Khushi Sarkar. If one steps on an unrighteous path, he will have to suffer the consequences.
| Bengali | English |
|---|---|
| শিরোনাম — অসৎ কর্মের ফল | Title — Asat Karmer Fol |
| কলমে — খুশী সরকার | Written by — Khushi Sarkar |
| বিষয় — সৎ-অসৎ | Subject— Honest/Dishonest |
| বিভাগ — ছোটগল্প | Genre — Short Story |
অসৎ কর্মের ফল (The Results of Unrighteous Deeds)
কলমে — খুশী সরকার (Author— Khushi Sarkar)
শ্যামলের মনটা আজ ভীষণ ভারাক্রান্ত। শ্রাবণের সন্ধ্যা। অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। জানলার দিকে মুখ করে উদাস ভাবে চেয়ে আছে শ্যামল। ঘরে ঢুকেই দীপ্তি শ্যামলকে দেখে একটা কষ্ট অনুভব করে বলে, "এইভাবে মন খারাপ করে বসে থেকে কি লাভ? জীবনে সবার কি স্বপ্ন পূরণ হয়? নাকি স্বপ্ন পূরণের কায়দা-কৌশল সবাই জানতে পারে? অত ভাবলে চলে? যা হবার তো হয়েই গিয়েছে। নাই বা হলো চাকরিটা। ওঠো চলো খেয়ে নেবে।" দীপ্তির কথায় শ্যামল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে বাইরে আসে। বাইরে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। লোডশেডিং চলছে।
"কি করবো এই অন্ধকারে? "ঝাঁঝিয়ে ওঠে শ্যামল। "আরে করবে আবার কী--" চলো এই ফাঁকে খেয়ে নিই।" চড়া সুরেই দীপ্তিও শ্যামলকে জানায়।
"কখন আসবে কারেন্ট, কে জানে? শুধু বসে বসে সময় নষ্ট করে তো লাভ নেই, ঘুমোতে হবে না? আপন মনে গজগজ করতে করতে দীপ্তি ভাত বাড়ে। দু'জনে খেতে খেতে হঠাৎ দীপ্তি বলে,"শোনো, এভাবে মন খারাপ করে সময় নষ্ট করলে চলবে না। যে কাজটা করছো সেটাই মন দিয়ে করো। "তবে হ্যাঁ রোজগার হয়তো কম, তাতে কি এসে যায়? একটা তো রোজগার আছে নাকি? আর একটা কথা তো বোঝো সদ্ভাবে জীবন যাপন করলে যে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় সেটা কি আর অন্যভাবে পাওয়া যায়? হ্যাঁ মানি এখন বেশিরভাগ লোকই অসৎভাবে যে যতটা পারে আখের গোছানোর চেষ্টা করে। তা করুক না, আমাদের অত কিছু দরকার নেই। মোটামুটি খেয়ে পরে বাঁচলেই হল।"
এইভাবে বাঁচাকে তুমি 'বাঁচা' বলছো? দেখো মানুষ কে কিভাবে টাকা কামাই করছে কে তার খোঁজ রাখে? মোটকথা তোমার যদি বিশাল অট্টালিকা, বিশাল ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, আর দামি গাড়ি, দামি আসবাবপত্র ঘরে থাকে তাহলেই লোকে তোমাকে চিনবে, দাম দেবে নচেৎ আপনজনও তোমাকে চিনবে না, সেটা বোঝো তো?"
"ছাড়ো তো তোমার বাড়ি গাড়ি দামি দামি আসবাবপত্র?
অসৎভাবে কামাই করে বড়লোকি দেখানো আমার একদম পোষাই না,বুঝলে?
ওই তো তোমার ভাই, সে কিনা তোমার থেকে ১৬-১৭ বছরের ছোট। সেই তোমাকে ঠকাতে একটুও পিছপা হলো না। অবশ্য ওরই বা কি দোষ? গোড়াতেই যদি গলদ থাকে তাহলে সে তো ওই গলদ নিয়েই বেড়ে উঠবে নাকি? মুখে ভাত চিবুতে চিবুতে কথাগুলি এক নিঃশ্বাসে বলে যায় দীপ্তি।
শ্যামল কথা বলে না। একটু খেয়েই ঘরে গিয়ে মেয়ের পাশে কপালে হাত দিয়ে শুয়ে থাকে। প্রচণ্ড গরম। মেয়েটা ঘেমে একেবারে নেয়ে উঠেছে। সব সেরে দীপ্তি ঘরে গিয়ে মেয়ের জামাটা বদলাতে বদলাতে বলে এখনো সেই একই চিন্তাই করে যাচ্ছো? আরে ঘুমাও না। রাতে যদি ঠিকমতো না ঘুমাও তাহলে শরীর খারাপ করবে। কাল আর কাজে বেরোতে পারবে না। শরীরটাকে সুস্থ রাখার জন্য ঘুমানো প্রয়োজন, এটা কি তোমাকে নতুন করে জানাতে হবে আমায়?"
"আসলে চিন্তাকে তো থামিয়ে রাখা যায় না বলো? তাই ঘুম আসে না। ভাবছি শুধু, "আমার নিজের ভাই যাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছি, যাকে স্নেহ আদর দিয়েছি প্রাণ ঢেলে সেই কিনা আমাকে ঠকালো! অসৎভাবে আমাকে ঠকিয়ে বেশিরভাগ জমি নিজের নামে করে নিতে পারল?"
"করুক গে। অসৎভাবে কেউ কাউকে যদি ঠকায় তাহলে তার মূল্য তাকে দিতেই হবে একদিন, এটা মনে রেখো।" দৃঢ়ভাবে দীপ্তি শামলকে জানায়। তেমনি শ্যামল শান্তভাবে দীপ্তিকে বলে, এই যে তুমি সত্যের কথা বলছো, আজকাল তো সাত্ত্বিক মানুষ পাওয়াই ভার। বেশিরভাগই অসৎভাবে যে যতটা পারে আখের গোছায়। বরং যতটা অসৎ পথে নামতে হয়, তাতেও রাজি কারণ ঠাঁটবাঁট বজায় রাখতে হবে তো?
"আচ্ছা সেদিন যে তোমার ভাই এসে কি আলোচনা করবে বলে তোমাকে নিয়ে গেল তা কি আলোচনা হয়েছিল, কিছু বললে না তো?"
"কি আর বলবো, বলো? বলার কিছু নেই আমার।" স্বপনের আচরণে রাগে গা' টা রি রি করতে থাকে শ্যামলের।
"কেন"?
"আসলে ও ভেবেছিল আমি খুব বোকা" দীপ্তির দিকে তাকিয়ে বলে শ্যামল।
"আরে অতো ভনিতা না করে সোজাসুজি বলো না, কি বলেছিল?" একটু উত্তেজিত হয়ে বলে দীপ্তি।
"প্রথমেই বলল, তার একটা বাড়ি দরকার। কোয়াটারে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না। মেয়েটা বড় হচ্ছে। একটা বাড়ি না করলেই নয় তাই ওর প্রচুর টাকা দরকার।
"তুমি কি বললে? "দীপ্তির জিজ্ঞাসায় শ্যামল বলে,"আমি বললাম,কেন তোকে যে ৮ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল বাড়ি করার জন্য সেটা কি করলি?"আমার প্রশ্নের উত্তরে সে বলল, "ওই টাকা আর নেই। একটা ভালো বাড়ি বানাতে গেলে যে পরিমাণ টাকার দরকার তা বানাতে আমার নামের বাগানটা বিক্রি করলেই নাকি পাওয়া যাবে।"
"তুমি কি বললে" দীপ্তি উদ্বিগ্ন হয়ে শ্যামলের উত্তরের অপেক্ষা করে।
"আমি বললাম, তা এখন সম্ভব নয়। আমার এখন সামনে মেয়ের বিয়ে। এখন তোরা আয় সবাই মিলে বিয়েটা পার করি।" বলেই আমি চলে আসি" শ্যামলের এই কথা শুনে দীপ্তি তো রেগে লাল হয়ে শ্যামলের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে, "এই হলো তোমার ভাই। নিজের স্বার্থ ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।"
"ঠিকই বলেছো।" মাথা নেড়ে দীপ্তিকে সমর্থন করে শ্যামল।
দীপ্তি পুনরায় বলে,"একটা কথা বুঝলে, যে যেমন কর্ম করবে তেমনি ফলভোগ করবে। নাও এবার শুয়ে পড়ো। অনেক রাত্রি হল।" বলেই একদিকে পাস ফিরে শোয় দীপ্তি। পাঁচ মিনিট পরেই হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে বলে, "এ্যাই শোনো, ঘুমিয়ে পড়লে?"
"না, পড়িনি, বলো।"
"একটা কথা বলি।"
"আবার কি কথা?" বিরক্তির স্বর শ্যামলের কন্ঠে।
"ওই যে মিনা আছে না, আমার বান্ধবী। ওর বরের তো ওষুধের দোকান,তুমি তো জানো।"
"আরে জানি তো। কি বলবে একটু তাড়াতাড়ি বলো তো, আমার ঘুম পেয়েছে।"
"হ্যাঁ বলছি বলছি। ওই মিনার বরের ঔষধের দোকানে এবং ওই লাইনের বেশ কয়েকটা ওষুধের দোকানে তোমার ভাই স্বপন ঔষধ-----
"আরে কি হলো, বলো।" শ্যামলের ঘুম জড়ানো কথায় দীপ্তি দ্রুত বলে, "স্বপন ওদের সব্বার দোকানে সব ওষুধ সাপ্লাই করে আর একটা মোটা অঙ্কের টাকা পায়। এবার তাহলে ভাবো, একদিকে দু'জনেরই চাকরি। অন্যদিকে এই অসৎ উপায়ে টাকা রোজগার। তারপরেও ওদের আরো টাকা চায়!"
"যা ইচ্ছে তাই করুক। অন্যায় অসৎপথে পা রাখলে তার ফল তাকেই ভোগ করতে হবে।" কথাগুলো ঘুমের ঘোরে যেন মিলিয়ে যাই শ্যামলের মুখেই। মুহূর্তেই নাক ডাকতে থাকে। আর কথা না বাড়িয়ে দীপ্তিও মেয়ের উপরে হাত রেখে ঘুমোয়।
খুব সকালে, ছটার মধ্যে উঠে পরে দীপ্তি। তার স্কুল আছে। অন্যদিকে মেয়ে স্কুলে যাবে। শ্যামলও যাবে তার এজেন্সির কাজে। সুতরাং চটপট রান্না পুজো তাকে সারতেই হবে।
কয়েকদিন পর শ্যামলের এক বাল্যবন্ধু ফোন করে তাকে। শ্যামল তখন বাথরুমে। ফোনটা রিসিভ করে দীপ্তি বলে,"হ্যালো"
"হ্যাঁ হ্যালো আমি শ্যামলের বাল্যবন্ধু বলছি" ভেসে আসে ফোনের ওপার থেকে।
"হ্যাঁ বলছি, বলুন।"
"কে বলছেন?"
"আমি উনার ওয়াইফ দীপ্তি বলছি, বলুন। কিছু বলতে হবে? ও এখন বাথরুমে----"
"ও-ও, আচ্ছা ঠিক আছে।
ও বেরুলে একবার এই নাম্বারে ফোন করতে বলবেন।"
" অবশ্যই।" বলেই ফোনটা রেখে দেয় দীপ্তি। বাথরুম থেকে বেরিয়েই জিজ্ঞেস করে শ্যামল,"কেউ ফোন করেছিল?"
"তোমাদের গ্রামের তোমার এক বাল্যবন্ধু।"
কিছুক্ষণ পরেই ফোনটা বেজে উঠতেই রিসিভ করে শ্যামল জিজ্ঞেস করে, "কি রে রনক বলছিস?
"হ্যাঁ ভাই, কয়েকটা কথা বলার আছে তোকে। তুই জানিস কিনা তাই মনে হল তোকে জানানোর দরকার।"
"কি ব্যাপার রে?"
"আরে একজনের কাছে শুনলাম, তোর বাবা তোদের জমিজমার কিছু অংশ দুই মেয়েকে দিয়ে বাকিটা তোর ভাইকে দিয়েছে। তবুও তোর ভাই বাকি সবটুকুই চায় বলে রোজ অশান্তি তোদের বাড়িতে। তোর বাবা-মা বাড়ি ছাড়া এখন।"
"তাই? তবে প্রতিবেশী এক কাকার কাছে আমিও শুনেছি। আমাকে ঠকিয়ে যদি আমার ভাই বড়-লোক হয় তো হো। আচ্ছা, ঠিক আছে ভাই, একটু কাজে বেরোতে হবে, ফোনটা রাখি এবার।"
পরদিন তিনজনেই খাওয়া-দাওয়া সেরে দশটার মধ্যে বেরিয়ে পড়ে। দীপ্তি নিজের স্কুলে চলে যায়। শ্যামল মেয়েকে তার স্কুলে পৌঁছে চলে যায় নিজের কাজে। এভাবেই প্রতিদিন চলে তাদের।
মাস ছয়েক পর হঠাৎ একদিন রাত বারোটা নাগাদ শ্যামলের মোবাইল বেজে ওঠে। আতঙ্কিত হয়ে দু'জনেই দু'জনের দিকে তাকায়। মুহূর্তেই দীপ্তি ইশারা করে শ্যামলকে ফোনটা ধরার জন্য।
ফোন ধরতেই ওপার থেকে ভেসে আসে, "বাবু, তোর ভায়ের বিরাট অ্যাক্সিডেন্টে পা-টা বুঝি ভেঙেই গেছে!
"অ্যা, কি করে হলো?" আতঙ্কে শ্যামলের চোখ কপালে। ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসে, "নতুন মোটর সাইকেল নিয়ে স্বপন একটা লরিকে ওভারটেক করতে গিয়ে লড়িটার ধাক্কায় ছিটকে পড়ে যায় অনেকটা দূরে। হেলমেট থাকায় মাথাটা বাঁচলেও পা-টা বেকায়দায় পড়ে নাকি ভেঙেই গেছে।
"নতুন বাইক? "বিস্ময়ে শ্যামল জানতে চাইলে ফোনে ভেসে আসে, "আমরা কিনে দেইনি। ওর বউ এর কাছে শুনলাম, এক বন্ধুকে নাকি টাকা দিয়েছিল। অনেক দিন সে টাকা শোধ না করতে পেরে তার নতুন বাইকটা ওকে দিয়ে দিয়েছে। বাবার কাছে এই খবর জানতে পেরে শ্যামল তির্যকভাবে জানতে চায়,"দিয়েছে নাকি জোর করে নিয়ে এসেছে।"
"অত কথা বলতে পারব না" ক্রুদ্ধস্বরে জানাই সুবোধ বাবু। আচ্ছা ঠিক আছে রাখো। কাল সাড়ে সাতটার মধ্যে তোমার ওখানে চলে যাব। রেডি থেকো।"
দীপ্তি স্বপনের খবর শুনে মর্মাহত হয়। যাই হোক না কেন, তার একমাত্র দেবর বলে কথা। দীপ্তি বিয়ে হয়ে যখন ওদের বাড়িতে যায় তখন স্বপনের বয়স মাত্র ১৩ বছর। অত্যন্ত সুন্দর এবং শান্ত ছেলে। কিন্তু যতই দিন গেছে ততোই দীপ্তির কাছে স্বপন দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে। তার শান্ত স্বভাবের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল একটা হিংস্র পশু। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত স্বার্থপর। নিজেরটা ছাড়া কারো কথা ভাবেনি কখনো। আর চোখে মুখে দিনের পর দিন ক্রমশঃ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে একটা অহংকারী মূর্তি। শিক্ষা অর্থ তার গায়ে এঁকে দিয়েছে হিটলারের ছবি। আর এই হিটলারি মনোভাবেই দাদা-বৌদিকে কখনো মানুষ মনে করেনি। আর এক্ষেত্রে তার সুবিধা হয়েছে, দাদার নিজের তেমন রোজগার না থাকা।
বিশেষত শ্যামলের স্বভাবের প্রকৃতিও তাকে এই পথে হাঁটতে সাহায্য করেছে। যতদিন ধরে শ্যামলকে দীপ্তি দেখছে,তার মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিশেষ কোনো আগ্রহ বা ইচ্ছা কোনোদিনই দেখেনি। শুধু তাই নয়, বাবা-মা দীর্ঘদিন ধরে যে "থ্রি ইসটু ওয়ান" অনুপাতে দৃষ্টির পক্ষপাতিত্ব করে যাচ্ছে সে সম্পর্কেও কোনো সজাগ মনোভাব তার নেই। বরং বাবা-মা'র প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা বিন্দুমাত্র টলেনি।
পরেরদিন শ্যামল সকাল সকাল বাবাকে নিয়ে চলে যায় সোজা মালদায়। ওখানে গিয়ে খবরটা শুনে আতকে উঠে সে।
কয়েকটি ঔষুধের কোম্পানি শোকজ করেছে তাকে।
ওষুধের হিসেবে গোলমাল, নয় ছয় করেছে অনেক টাকা। শ্যামলের কানে কানে ফিসফিস করে বলে ওর মা, "জানিস, এই গাড়িটাও বোধহয় তার সেই টাকা দিয়েই কেনা। বন্ধু-টন্ধু এগুলো সব বানানো গল্প।"
শ্যামলের মুখটা যেন আনমনে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মনে মনে ভাবে দীপ্তির কথাই ঠিক। সৎ মানুষ হয়তো কখনো অর্থ প্রাচুর্যের বিলাসী জীবন যাপন করতে পারে না ঠিকই কিন্তু বিলাসী জীবনের চেয়েও 'শান্তি' নামক পবিত্র যে শিশু সৎ ব্যক্তির বুক পকেটে খেলা করে কোনো জাঁক-জমকী বিলাসী ব্যক্তির বুক পকেটে সেই শিশু খেলতে পারে না সেভাবে। এখানে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে দিন রাত। তাই ভুলে যায় সৎ- অসৎ এর ব্যবধান। ছিঁড়ে ফেলে আপনজনের আন্তরিক বন্ধন। হারিয়ে ফেলে বাবা-মার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। আর হয়তো তাই আজ এই অবস্থা —
" কি রে বাবু, তুই সঙ্গে যাবি না" মায়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় শ্যামল। হতচকিত হয়ে বলে, "কোথায়?"
"ওরে স্বপনকে রেফার করে দিয়েছে ডাক্তার, কলকাতায়। তুই কি যাবি বাবা?" কাঁদো কাঁদো স্বরে জিজ্ঞেস করে মনিমালা।
"হ্যাঁ,মা যাবো তো বটেই, ও তো আমার ভাই, তাই না?"
"হ্যাঁ বাবা, যা যা যতই হোক তোর ছোট ভাই। মনে কিছু রাখিস না বাবা এই সময়। ওকে সুস্থ করে নিয়ে আয়।"
দীর্ঘ ছয় মাস পর সুস্থ হয়ে ফিরে আসে স্বপন স্ত্রী সন্তানের কাছে। সে চাকরিটা তার চলে গেছে। এখন একটা সার কোম্পানিতে কাজ করে।
একদিন শ্যামল এল.আই.সি অফিসে ঢুকতেই দেখে স্বপন বেরিয়ে আসছে অফিস থেকে। স্বপন লক্ষ্য করেনি শ্যামলকে কিন্তু শ্যামল পিছন থেকে দেখে স্বপনের সেই তেজী ঘোড়ার বেগটা আর নেই। তার গতির বেগ যেন অনেকটা কচ্ছপের মতো। একটু টেনে টেনে বেঁকে বেঁকে থেমে থেমে স্বপন হেঁটে চলে গেল দৃষ্টিপথের বাইরে। আকাশে তখনো শ্রাবনের মেঘ জমে আছে। আবছা অন্ধকারে ঢাকা চারদিক। শ্যামল তাড়াতাড়ি রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।
তাং-৩১-০৭-২০২২
সমাপ্ত

No comments:
Post a Comment
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.