'Papayer Dui-Taka' Short Story Penned: Khushi Sarkar - Nabo Mukul

Latest

Bengali poem, Short story, essay and modern poems as education base

13 Jul 2025

'Papayer Dui-Taka' Short Story Penned: Khushi Sarkar

'Papayer Dui-Taka' Short Story Penned: Khushi Sarkar

স্থান— রথের মেলা
শিরোনামের বিষয়— সহানুভূতি ও মানবিকতা
অনুগল্প— পাপাইয়ের দুই টাকা
কলমে— খুশী সরকার

Papayer Dui-Taka Short Story Penned by Khushi Sarkar

পাপাইয়ের দুই টাকা অনুগল্প কলমে: খুশী সরকার

বাড়ির সামনে দিয়ে প্রচুর লোক যেতে দেখে পাপাই দৌড়ে গিয়ে দাদুকে জিজ্ঞেস করে, "দাদু এত লোক কোথায় যাচ্ছে?"

—অমিতবাবু বই থেকে চোখ তুলে বলে,"রথের মেলায়।"

—পাপাই অমনি বলে,"আমিও যাবো দাদু?"

—মেলায় গিয়ে কি করবি?"

—খেলনা কিনবো"

—আকাশে মেঘ করেছে যদি বৃষ্টি আসে, কেমন করে কিনবি?

—অমনি পাপাই একগাল হেসে বলে, তোমার জামার ভেতরে ঢুকে যাব। আর ভিজবো না---।"

—ওরে বাবা,দাদুভাইয়ের কি বুদ্ধি! অমিতবাবু নিজেই অস্ফুটে উচ্চারণ করে বলে,"আচ্ছা যাও, মা'কে ভালো জামা প্যান্ট পরিয়ে দিতে বলো।"

—"অমনি 'ওমা' 'ওমা' চিৎকার করতে করতে পাপাই মা'কে গিয়ে বলে, "আমাকে ভালো জামা প্যান্ট পরিয়ে দাও, আমি দাদুর সঙ্গে রথের মেলায় যাবো।"

—"না বৃষ্টির দিন যেতে হবে না।"

—শুনে আদুরে স্বরে পাপাই বলে,

—"যাব মা-আ। দাদুর সঙ্গে যাব তো। আমি শক্ত করে দাদুর হাত ধরে থাকবো।"

—"ঠি-ক?"

—"তুমি দাদুর কাছে শুনে নিও।" শিউলি পাপাইকে জামা প্যান্ট পরিয়ে বলে, "দাদুর হাত ছাড়বি না বাবা,কেমন।"

—"হ্যাঁ, মা।" বলেই এক দৌড়ে দাদুকে গিয়ে বলে," দাদু চলো তাড়াতাড়ি।"

—দারুণ খুশিতে দাদুর হাত ধরে নাচতে নাচতে পাপাই যাচ্ছে রথের মেলায়। মেলায় পৌঁছাতেই প্রচুর লোক দেখে পাপাই অবাক! মেলার মাঝখানে বড় বড় চাকার রথটা দেখতে পেয়ে দাদুর হাত টেনে আঙুল দেখিয়ে বলে, "ওটা কি দাদু?"

—"ওটাই তো রথ দাদুভাই।"

—"ওর ভিতরে কে বসে আছে?"

—পাপায় প্রশ্নের উত্তরে অমিতবাবু বলে, "ওই রথের ভেতরে বলরাম, সুভদ্রা আর জগন্নাথ ঠাকুর বসে আছে।"

—"তাই?"

—হঠাৎ দাদুর হাত টেনে পাপাই মেলার ওপাশে পাপড়ের দোকান দেখিয়ে বলে,

—পাপড় খাবো দাদু?

—অগত্যা অমিতবাবু ভিড় ঠেলে ওপারে পাপড়ের দোকানে গিয়ে একটা গরম পাপড় কিনে দেয় পাপাইকে।

—খুশি হয়ে পাপড় খেতে থাকে পাপাই, আনন্দে মেলার চারিদিক দেখতে থাকে।

—ঠিক সেই সময় সামনে এসে দাঁড়ায় ছেঁড়া জামা গায়ে, কঙ্কালসার একটি দশ/বারো বছরের ছেলে তাদের সামনে। মুখটা যেন অনেকদিনের খিদেতে শুকনো হয়ে গেছে। হাত পেতে করুন সুরে বলে, —

—"বাবু দুটো টাকা দাও, খুব খিদে পেয়েছে।"

—পাপাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে, ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

—ছেলেটির কথা শুনে পাপাই দাদুকে বলে, দাদু, তুমি ওকে ২ টাকা দাও না? ওর খিদে পেয়েছে।"

—দাদু একটু অবাক হয়, — তুমি খেলনা কিনবে না? চলো, তোমাকে খেলনা কিনে দিই।"

— পাপাই শান্ত গলায় বলে, "আমি এমনি এমনি বলেছিলাম দাদু, আমার তো কত্ত খেলনা! তুমি ওই টাকাটা ওই দাদাটাকে দাও, ও কিছু কিনে খাবে।"

—"খেলনা নেবে না?"

—"না।"

—অমিতবাবু পাপাই-এর কথা শুনে অবাক, তাঁর চোখে জল এসে যায়।

—"ঠিক আছে দাদুভাই" বলেই অমিতবাবু ছেলেটিকে মিষ্টি কিনে দেয়। ছেলেটি মিষ্টি পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে খেতে থাকে।

—ছেলেটির খাওয়ার দিকে তাকিয়ে পাপাই ইশারায় দাদুকে বলে, "দাদু দেখছো, ওর খুব খিদে পেয়েছিল।

—"পাপাইয়ের এমন আচরণে অমিতবাবু মনে মনে গর্ব অনুভব করে।


—পাপড়ের গন্ধে ভরা সেই দুপুরে, পাপাইয়ের ছোট্ট হৃদয়টা বুঝিয়ে দিল— ভালোবাসা, করুণা আর সহানুভূতির দাম টাকা দিয়ে মাপা যায় না।



শেষ।



(একটি শিশুর দয়ার দৃষ্টিই বদলে দিতে পারে কোনো অনাহারের গল্প।)

No comments:

Post a Comment

Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.