The Essay Jibanananda Daser Anannyata by Khushi Sarkar - Nabo Mukul

Latest

Bengali poem, Short story, essay and modern poems as education base

2 Mar 2022

The Essay Jibanananda Daser Anannyata by Khushi Sarkar

The Essay Jibanananda Daser Anannyata by Khushi Sarkar.

Name of Essay - Jibanananda Daser Anannyata,
Author - Khushi Sarkar,

প্রবন্ধ - কবি জীবনানন্দ দাশের অনন্যতা

কলমে - খুশী সরকার

বিংশ শতাব্দীর জটিল মানসিকতার সার্থক প্রতিভূ আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের সমকালে এমনকি পরবর্তীকালেও বাংলাকাব্যে যে নতুন কথা ও রীতি প্রবর্তনের বিষয় অন্যান্য কবিরা ভাবতে পারেননি,সেই নতুন রীতি প্রবর্তনের অন্যতম অগ্রনায়কত্ব অর্জন করেছেন জীবনানন্দ দাশ। এদিক থেকে তিনি শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। তাঁর কাব্যে বিশ্বকবির উজ্জ্বল বিশ্বাস কিম্বা শান্তি হারক বলিষ্ঠ আশাবাদ নেই যুগগত এবং ব্যক্তি মানসিকতার কারণে কিন্তু যে যুগে জীবনানন্দ দাশ কাব্য অনুশীলনে ব্রতী হয়েছিলেন সেই যুগ ছিল আশাভঙ্গের নিদারুণ আক্ষেপের।তাই সেই যুগে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার আলোতে তিনি প্রদীপ্ত হয়ে জ্বলে উঠতে পারেননি।

সেসময়ে তাঁর চোখে ভেসে উঠেছে অসহায় নিপীড়িত মানুষের মুখের ছবি,যারা মাটি থেকে দু'হাত তুলে শূন্যতাকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছে মাটিতেই, সেই যুগ ও পরিবেশের তীব্র তীক্ষ্ণ অভিজ্ঞতা জীবনানন্দ দাশের কাব্য কবিতায় সার্থকভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

কবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন শিক্ষক এবং ব্রহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন কবি। জীবনানন্দের পড়াশোনার শুরু বাড়িতে হলেও ১৯১৫ খ্রীঃ বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯১৭ খ্রীস্টাব্দে আই.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৯ খ্রীস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্স সহ বি.এ এবং১৯২১ খ্রীস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। আইন পড়া শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পারেননি।

কবি জীবনানন্দ দাশের কর্মজীবন ছিল বর্ণবহুল এবং বৈচিত্র্যময় নানা অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় জর্জরিত।১৯২২খ্রীঃ সিটি কলেজে ইংরেজি বিভাগে টিউটরের পদে যোগ দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা। আর্থিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে সিটি কলেজে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়ে তিনি কয়েক মাস অধ্যাপনা করেন খুলনা বাগেরহাট কলেজে এবং ১৯২৯ খ্রীস্টাব্দে দিল্লির রামযশ কলেজে যোগ দিলেও সেই চাকরিও চলে যায় ১৯৩০ খ্রীস্টাব্দে। তারপর ১৯৫০ খ্রীস্টাব্দে খড়্গপুর কলেজ এবং ১৯৫২খ্রীঃবরিষা কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। সেই চাকরিও চলে যায় ১৯৫৩ খ্রীস্টাব্দে। অবশেষে ওই বছরই যোগ দেন হাওড়া গার্লস কলেজে এবং আমৃত্যু অধ্যাপক হিসাবে যুক্ত ছিলেন সেখানেই।

কবির কাব্য জীবন শুরু হয় অল্প বয়সে ব্রহ্মবাদী পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ঝরাপালক' প্রকাশিত হয় ১৯২৭ খ্রীস্টাব্দে ১৯৩৬ খ্রীস্টাব্দে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধূসর cvÊzwjwcএবং সেখান থেকে তাঁর বিশিষ্ট কবি রূপে জয়যাত্রা শুরু। চিহ্নিত হন আধুনিক স্বতন্ত্র কবি হিসেবে। তারপর প্রকাশিত হয় বনলতা সেন, মহাপৃথিবী,সাতটি তারার তিমির এবং 'জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা'। মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় 'রূপসী বাংলা', বেলা অবেলা কালবেলা, মন বিহঙ্গম, আলোপৃথিবী প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ।

কবি জীবনানন্দ দাশ কবিতা রচনার পাশাপাশি লিখেছেন বহু গল্প-উপন্যাস কিন্তু এগুলো প্রায় আড়ালেই থেকে গিয়েছিল তার জীবনে, সেগুলো প্রকাশিত হওয়ার ফলে কবি সম্পর্কে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে মানুষের মনোজগতে। 'জলপাইহাটি', 'মাল্যদান', 'সুতীর্থ', 'কারুবাসনা', 'জীবনপ্রণালী' প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। লিখেছেন বহু ছোটগল্প‌ও এবং সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ। 'কবিতার কথা' তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ সংকলন।

কবি জীবনানন্দ দাশের সমগ্র কাব্যসাধনায় আছে তিনটি পর্যায়। প্রথম পর্যায়ে নিসর্গের প্রাধান্য, দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রেমের প্রাধান্য এবং তৃতীয় পর্যায়ে মানব সভ্যতার ইতিহাস। নিসর্গের প্রাধান্যের পর্যায়ে প্রেম ও ইতিহাস চেতনা নিসর্গ প্রকৃতিকে করেছে জীবন্ত এবং অন্তরঙ্গ।

প্রেমের প্রাধান্যে দ্বিতীয় স্তরে আছে নিসর্গ ইতিহাস ও প্রেমের মুখচ্ছবির উপর আলো-ছায়ার আলপনা। অন্যদিকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে তৃতীয় পর্যায়ে নিসর্গ এবং প্রেম ইতিহাসের গ্লানি ও মালিন্য অপসৃত হয়েছে।

কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ঝরাপালক'-এ সমসাময়িক বিপর্যস্ত নগরজীবনের অসহায়তা যেমন প্রকাশ পেয়েছে তেমনি রবীন্দ্রবলয় থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা হয়েছে ধ্বনিত। 'পিরামিড' কবিতায় কবির শাশ্বত চিন্তা এক অভিনব আঙ্গিকে প্রকাশিত হয়েছে এইভাবে----"ধুম্র মৌন সাঁঝে

নিত্য নব দিবসের মৃত্যুঘন্টা বাজে,

শতাব্দীর শবদেহে শ্মশানের ভস্মবহ্নি জ্বলে;

পান্তম্লান চিতার কবলে

একে-একে ডুবে যায় দেশজাতি সংসার সমাজ;

কার লাগি, হে সমাধি, তুমি একা বসে

আছো আজ----

কী এক বিক্ষুব্ধ প্রেতকায়ার মতন!

অতীতের শোভাযাত্রা কোথায় কখন

চকিতে মিলায়ে গেছে পাও নাই টের;"

দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'ধূসর পাণ্ডুলিপি'-তে মৃত্যুচেতনার প্রেক্ষাপটে সমকালীন অবক্ষয়িত সমাজজীবন প্রতিবিম্বিত হলেও জীবনবাদীতায় জীবনের ধারাকে প্রবলতর করতে চেয়েছেন তিনি। এখানে ধ্বংসোন্মুখ হেমন্তশ্রী প্রকৃতির রাজ্যে নতুন সম্ভার নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। আর 'রূপসী বাংলা'-র পর্যায়ে বাংলাদেশের নিপুন নিসর্গ চিত্রের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে রূপকথা ও ইতিহাসের ধূপছায়া, যেখানে তিনি বলেন,

"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ

খুঁজিতে চাই না আর; অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে

চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে

ভোরের দোয়েল পাখি--- চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ

জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;......"

এই নিসর্গ প্রকৃতিকে ভালোবেসে তিনি তার জন্ম মৃত্তিকা এই বাংলার বুকে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখে বলেন,

"আবার আসিব ফিরে--ধানসিঁড়িটির তীরে--- এই বাংলায়

হয়তো মানুষ নয়-- হয়তো-বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;......"

'বনলতা সেন' কাব্যে ধূসর পাণ্ডুলিপির দীর্ঘশ্বাস যেন 'বনলতা সেন' কবিতায় শান্তি ও স্বস্তি লাভ করেছে। হাজার বছর ধরে কবির পথচলার ক্লান্তি অবসিত হয়েছে বলেই তিনি বলতে পেরেছেন, "আমারে দু'দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন"

'মহাপৃথিবী'-তে আধুনিক যুগের যন্ত্রণা জর্জর ক্ষতবিক্ষত মানুষের অসাধারণ রূপচিত্র প্রকাশ করেছেন। 'সাতটি তারার তিমির'-এ কবি প্রাকৃত পৃথিবীর প্রচ্ছায়ায় আলোড়িত, আতঙ্কিত এবং অভিভূত। 'রূপসী বাংলা'য় কবির জীবন ক্লান্তিমুক্ত অভিনব আশ্রয়-চেতনায় সমৃদ্ধ। তিনি আশ্রয় লাভ করেছেন নিসর্গের কাছে। 'বেলা অবেলা কালবেলা'য়

কবিমানসের অনীহার ক্রমবিস্তার। এখানে আত্মবিকলন ভয়ঙ্কর কিন্তু আত্মদর্শন রমণীয় নয়। 'সুদর্শনা' কাব্যগ্রন্থটি মূলত কবির প্রেমচেতনার আলপনা।

সাদা-কালো মিশিয়ে যে ধূসর রঙ, সেই ধূসর রঙ‌ই কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রাধান্য পেয়েছে। আসলে যুগমানসিকতার জটিল মনের প্রতিফলন হিসেবে তাঁর নতুন চেতনার জগৎ যেমন সৃষ্টি করেছে তেমনি তার বহিঃপ্রকাশেও ঘটেছে জটিল অভিব্যক্তি

কবি নিসর্গ প্রকৃতির অপরূপ রূপ প্রত্যক্ষ করে তাকেই ভালোবেসে মমত্ববোধে নিয়েছেন আপন করে তবে প্রকৃতির বেদনার আঘাত আর হিংস্রতা যেমন আছে তেমনি প্রকৃতিলীন জীবনের প্রতি তাঁর আস্থাও আছে নতুবা জীবনের শান্তি-সান্ত্বনা- তৃপ্তির কোনো অবকাশই থাকে না। তাইতো কবি জীবন ও হৃদয়ে বিশ্বাসী। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি থেকে জন্ম হয়েছে নারী। নারী- রূপ-সৌন্দর্য অঙ্কনে তিনি প্রকৃতিদেহে নারীরূপের আরোপ করেছেন। প্রকৃতি তাঁর কাছে নিষ্প্রাণ জড়বস্তু নয়,সজীব-প্রাণোচ্ছল। আর এই প্রকৃতির সঙ্গে তিনি প্রেমকে দেখেছেন অবিচ্ছিন্নভাবে। প্রেম ক্ষণিক হলেও প্রেমের মহত্ব গৌরবে তিনি আস্থাশীল।

কবি জীবনানন্দ দাশের 'বনলতা সেন' রবীন্দ্রোত্তর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমের কবিতা। কবি এখানে 'বনলতা সেন' নামে নায়িকার যেমন নাম পদবী এবং ভৌগোলিক অবস্থানের সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে তাঁকে অন্তরঙ্গ করে তুলেছেন তেমনি আবার হাজার বছরের পুরনো পটভূমির পরিবেশে তাঁর বিস্তৃতি দিয়ে আশ্চর্য রহস্যময়ী করে তুলেছেন। কিন্তু তিনি জানেন যে দেহসর্বস্ব প্রেম যেমন ক্লান্তিকর তেমনি তার নিরাবয়বতাও অতৃপ্তিকর। তাই তিনি বনলতা সেনের শরীরে ঐশ্বর্য্যের যেমন পরিচয় দিয়েছেন তেমনি তাকে শুধু দেশকাল প্রসারিত রহস্যময়তায় অঙ্কন করেছেন। বনলতা সেনের প্রথম সাক্ষাতে তিনি প্রকৃতির কাছে গভীর শান্তি অনুভব করেছিলেন আবার হাজার বছর ধরে নিরন্তর পথ চলার ক্লান্তি মুছে দু'দণ্ড শান্তি পেয়েছেন নাটোরের এই বনলতা সেনের কাছে। জীবনের চারদিকে যে হতাশা নিরাশাময় জীবনের সমুদ্র সফেন, তারি মাঝে তিনি এক ক্লান্ত প্রাণ তাই তাঁর ক্লান্তির অবসান ঘটেছে বনলতা সেনের সান্নিধ্যে। তিনি এও জানেন ক্ষণিকতাই প্রেমের ধর্ম তবুও এই ক্ষণিকতা স্মৃতি- স্বপ্নের জগতে কালের সীমা অতিক্রম করে বেঁচে থাকবে চিরকাল চিরদিন।

ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য দৃশ্যমান জগৎ ও জীবনের মননশীল বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যায় কবি এক অনন্যতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর মতে শুধু সুন্দরের গান গাওয়া যেমন একদেশদর্শীতার পরিচয় তেমনি শুধুমাত্র দুঃখ-দুর্দশার বর্ণনা খণ্ড-দৃষ্টির নিদর্শন বলে তিনি মনে করেন। তাই তিনি রবীন্দ্রবিরোধী দুঃখবাদী কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের নেতিবাচক জীবন-দর্শন গ্রহণ করেননি বরং তাঁর মতে জীবনে আনন্দ ও দুঃখ দুই-ই আছে সুতরাং এই আনন্দ ও দুঃখের প্রত্যক্ষ অনুভব এবং অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তাঁর হৃদয়ে ঘটেছে নতুন চেতনার উন্মেষ। এই চেতনার উন্মেষেই তাঁর হৃদয়ে চলেছে নিরন্তর সৃষ্টির ভাঙ্গা গড়া এবং এই চেতনার জগতে তিনি মনে করেন জীবন-মৃত্যু, আনন্দ-বেদনা, ধ্বংস-সৃষ্টি, বাস্তব-স্বপ্নকে অনুভব করতে হবে এবং এই বহুবিচিত্র বৈপরীত্য-বিরোধিতার মধ্যেই ঘটাতে হবে সংগতি-সামঞ্জস্য বিধান। এখানেই তিনি রবীন্দ্রানুসারী কিম্বা সমকালীন কবিদের থেকে গড়েছেন ব্যবধান।

কবির মতে বহুব্যবহৃত নিঃশেষিত সৌন্দর্যকে নিয়েই যখন রবীন্দ্রানুসারী কবিসমাজ আবার সেই সৌন্দর্যের‌ই অনুধ্যান করেন তখন তাঁদের সেই অনুধ্যানের ব্যর্থতা তিনি লক্ষ্য করেছেন। তাই তিনি বলেন, "রূপ ঝরে যায়-- তবু করে যারা সৌন্দর্যের মিছা আয়োজন,--

যে যৌবন ছিঁড়ে ফেঁড়ে যায়,
যারা ভয় পায়
আয়নায় তার ছবি দেখে'
শরীরের ঘুণ রাখে ঢেকে',
ব্যর্থতা লুকায়ে রাখে বুকে,
দিন যাহাদের অসাধে--অসুখে।"

এই উপলব্ধির পরেও তিনি সমকালীন কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের মত জীবনের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার বাসনাও পোষণ করেননি এই বলে, "কামারের সাথে হাতুড়ি পিটাই"। এমনকি সমকালীন কবি বুদ্ধদেবের মতো তিনি নারীর প্রতি অনুরাগ-বিরাগকে সর্বস্ব করেও কাব্য রচনা করেননি।

একান্ত বাস্তব সচেতন ও তার জগত এবং একান্ত প্রেম সর্বশ্রোতা জগত থেকে সমদূরত্বের ব্যবধান রচনা করেছেন তার মূল এই কোভিদ হৃদয়ে উন্মেষিত এই স্বতন্ত্র বোধ, যা তিনি অতিক্রম করে যেতে পারেন না। তাই কাব্যে তিনি এই স্বতন্ত্র বোধকে অনায়াসে গ্রহণ করে 'বোধ' কবিতায় বলেন,"মাথার ভিতরে

স্বপ্ন নয়--- প্রেম নয়--- কোন এক বোধ কাজ করে।"

বস্তুত কোভিদ হৃদয় এই বোধের উন্মেষের ফলে তিনি কারও চলার পথ অনুসরণ না করে সম্পূর্ণ নতুন পথ কেটে কাব্য-ঐতিহ্য থেকে নিজের কবিকর্মের অনন্যতা দেখিয়েছেন।

কবি জীবনানন্দ দাশের অনন্যতা শুধু কাব্য রচনার ক্ষেত্রে‌ই নয়, ভাষা, ছন্দ, অলঙ্কার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তিনি স্বতন্ত্র পথের পথিক। তিনি নতুন বাক্যাংশ সৃষ্টি করে তাতে নতুন ব্যঞ্জনা দান করেছেন যা রবীন্দ্রনাথ ব্যতীত অন্য কোন কবির পক্ষে নতুন ভাষা নতুন বা বাক্যাংশ সৃষ্টি করা প্রায় দুরূহ ব্যাপার ছিল। আর এই দুরূহ ব্রত পালনে কবি জীবনানন্দ দাশ সার্থক হয়েছেন তার চেতনার জগত কোন বিধাতার সৃষ্টি জগতের অনুকরণ নয় কিংবা জগত রহস্যের ব্যাখ্যাও নয়, এই জগত তাঁর নিজস্ব অনুভূতি উপলব্ধির আলো-ছায়ায় গড়ে তোলা এক নতুন চেতনার জগৎ। কবিসত্তার অনন্য সাধারণ স্বতন্ত্রতায় সময়চেতনা, ইতিহাসবোধ,রূপকল্পচেতনা ও ছন্দে বাংলা কবিতার জগতে এক নতুন ঐতিহ্যর জগৎ রচনা করেছেন যা আজকের কবিতার গঙ্গোত্রীধারা।

১৯৫৪ খ্রীস্টাব্দের ১৪ই অক্টোবর কবি জীবনানন্দ দাশ রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রাম দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। ২২শে অক্টোবর তাঁর জীবনাবসান ঘটে। এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়াতে সাহিত্যচর্চার জীবনে তাঁর যবনিকা নেমে আসে কিন্তু শিল্পের মৃত্যু হয় না কোনোদিনও। তাই তাঁর নশ্বর দেহের সমাপ্তি ঘটলেও তিনি যা সৃষ্টি করে গেছেন এই সৃষ্টির মধ্যে তিনি বেঁচে থাকবেন আধুনিক কাব্য সাহিত্যের ইতিহাসে চিরভাস্বর রূপে।

তাং-১৯-০২-২০২২

No comments:

Post a Comment

Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.